স্টাফ রিপোর্টারঃ
চাঁদপুরে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করার অভিযোগে এক গৃহবধূর দায়ের করা মামলায় কথিত সাংবাদিক আলমগীর হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ২’রা সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আযম আদালতে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জানা যায়, ষোলঘর মোল্লাবাড়ীর মৃত হাজী মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান বেপারীর স্ত্রী আফরোজা ছিদ্দিক (৪২) এর দায়ের করা সি-আর-৫০-২০২০ইং চাঁদাবাজির মামলায় কথিত এই সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন ওরোফে আলমগীর বাবুকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এদিকে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁদপুর সদর মডেল থানার এস আই বিপ্লব চন্দ্র নাহা। তার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,আফরোজা ছিদ্দিকের স্বামী হাজী মোহাঃ ছিদ্দিকুর রহমান বেপারী চাঁদপুুর কোর্ট স্টেশান রেলওয়ে হকার্স মার্কেটে প্লট নং-এ/১৬৫ এর ১০ গুন ১০ অর্থাৎ ১০০ বর্গ ফুট জায়গা ও তদস্থীত দোকান ঘর তরপুরচন্ডী এলাকার জনৈক মো. মজিবুর রহমান বন্দুকশীর ১৯৯৯ সালের ১০ই জুন ক্রয় করে মালিক হন।কিন্তু মালিক বিদেশ থাকায় এই জমির দোকানঘর ও জমি
ভোগদখল করতো তার স্ত্রী।এই পর্যায়ে আসামী মো. আলমগীর বাবু ২০১০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মেয়াদের জন্য ওই দোকান অস্থায়ী মাসিক ভাড়ায় ভাড়া নিয়ে কোকারিজ দোকান দিয়া ব্যাবসা পরিচালনা করতে থাকে।কিন্তু বিবাদীর চুক্তিমত ভাড়ার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই জমির মালিক বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসে।ওই তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়,ওই দোকানঘরের মূল মালিক দেশে আসার পর তার কর্মসংস্থানের জন্য আর অন্য কোন উপায় না পেয়ে তিনি ওই দোকানঘর নিজে পরিচালনা করার পরিকল্পনা নেয়।পরে শর্তসাপেক্ষে চুক্তিকৃত মেয়াদ ২০১২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর অতিক্রম হওয়ার পরেও আসামী মো. আলমগীর হোসেন দোকানের দখল ছাড়তে নানা টালবাহানা শুরু করে।পরে বিষয়টি মার্কেট কমিটির কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাদের অনুরোধে পরবর্তীতে আরো ২ বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৩০শে অক্টোবর সময় পর্যন্ত মো. আলমগীর হোসেনকে পুনরায় ভাড়ার মেয়াদ বৃদ্ধি করে ব্যবসা করার জন্য ভাড়া দেয়।এমনকি এই পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও মো. আলমগীর হোসেন ওই দোকানঘর ছেড়ে দেয় নাই।এই অবস্থায় মার্কেট কমিটির নেতৃবৃন্দের নির্দেশে মো. আলমগীর হোসেন ২০১৬ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি দোকান হতে তার মালামাল নিয়ে দোকান ছেড়ে চলে যায়।পরে মার্কেট কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ দোকানে তালা লাগিয়ে দেন।ইতিমধ্যে ওই দোকানের মালিক হাজী মো. ছিদ্দিকুর রহমান মারা যাওয়ায় ওই দোকান ঘর ও ভূমি তার ছেলে অর্থাৎ এই মামলার সাক্ষী ইত্তেফা ছিদ্দিকী,সাওবান ইবনে ছিদ্দিক,সাওদা বিনতে ছিদ্দিক,সামাউন বিনতে ছিদ্দিকগনদের নামে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হতে তাদের নামে নামজারী করে নিয়ে আসে।বর্তমানে এই মামলার সাক্ষীগণ ওই দোকানঘর যথানিয়মে ভোগ দখল করছে।এই বিষয়ে ওই মামলার তদন্ত রিপোর্ট থেকে আরো জানা যায়,মো. আলমগীর হোসেন ওই দোকান থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে মামলার বাদীনি এবং তার পরিবারের সকল সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন।এতেই সে ক্ষান্ত না হয়ে বাদীনি পক্ষকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়াইয়া হয়রানি করে আসতেছিলো।এই অবস্থায় বিবাদী মো. আলমগীর হোসেন বাদীনিসহ তার ছেলেদের নিকট অবৈধভাবে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে।এই টাকা না পেলে মামলার বাদীনিসহ তার ছেলেদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলো।এই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৫শে জানুয়ারি সকালে বাদীনির বসত বাড়ীতে গিয়ে বাদীনিকে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে বলে এবং না দিলে বাদীনিকে দেখে নেওয়ার হুমকি-ধমকিসহ বাদীনির ছেলেদের খুন করে তাদের বাড়িঘর আগুন দিবে বলে পুনরায় হুমকি দেয়।তা না পারলে প্রয়োজনে মিথ্যা মামলায় জড়াইয়া জেল হাজতে পাঠাইবে বলেও হুমকি দিয়ে মারধর করার জন্য আক্রমণ চালিয়েছে।ওই সময়ে ঘটনা দেখে ও হৈ চৈ শুনে আশ-পাশের লোকজন ও অন্যান্য সাক্ষীগণ এগিয়ে আসলে মো. আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত চলে যায়।এদিকে এ তদন্ত রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসিম উদ্দিন।এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিশোধ নিতে মো. আলমগীর হোসেন বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকায় বেপরোয়া চলাচল করতে শুরু করে।সে মূলত মানুষকে জিম্মি করার চক্রান্তে মেতে উঠেছিলো। এদিকে এ মামলা প্রসঙ্গে বাদীনির পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আবদুল হান্নান কাজী জানান,মামলাটির ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়া সত্ত্বেও মো. আলমগীর হোসেন পলাতক ছিলো।এরপর সে পলাতক থাকা অবস্থায় আদালতে আআত্মসমর্পণ করতে আসলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।এদিকে এ মামলায় আসামী মো. আলমগীর হোসেনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. ফজলুল হক সরকার।