মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
চট্টগ্রামে হাজীগঞ্জের শিশু আরাফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে আগামি বৃহস্পতিবার। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করেন। এর আগে গত বুধবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে এ মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল। ওই দিন রায় ঘোষণা না করে আগামি বৃহস্পতিবার নতুন করে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
হত্যাকান্ডের শিকার আড়াই বছরের শিশু আরাফ হাজীগহ্জ উপজেলার গন্ধর্বপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম ও ফারহানা বেগম দম্পত্তির একমাত্র সন্তান। আব্দুল কাউয়ুম একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরী করার সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ২০২০ সালের ৬ জুন ওই বাসার পানির ট্যাংকি থেকে শিশু আরাফের লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয় দুই বছরের শিশু আরাফকে। ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় আসামি করা হয় মিয়াখান নগরের বাসিন্দা মো. ফরিদ, ভাড়া বাসার দারোয়ান মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগমকে। তারা শিশু আরাফের হত্যাকান্ডে জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ দিকে শিশু আরাফ হত্যায় ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে শিশুটির বাবা আব্দুল কাইয়ুম ও মা ফারহানা বেগম জানান, আমরা মাননীয় আদালতের কাছে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড প্রার্থণা করছি।
শিশুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকালে মিয়াখান নগরে ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চেয়েছিল। এ সময় আরাফের মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভিতরে যান। তিনি ফিরে এসে দেখেন ছেলে নেই। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান নাজমা বেগম।
সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ভবনটির বাসিন্দা নাজমা বেগম, তার ছেলে বাড়ির দারোয়ান হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তখন নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করেন ।
নাজমা আদালতে দেওয়া জবানবন্দি তারা বলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন। ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক।
মূলত তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান ফরিদ। আসামী ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারে হামলার ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি ক্ষুদ্ধ ছিলেন।