• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

ঘূর্ণিঝড় আম্পান কে ঘিরে চাঁদপুরে ৩’শ ২৪ সাইক্লোন শেল্টারে ছুটছে মানুষ

আপডেটঃ : বুধবার, ২০ মে, ২০২০

 

 

অমরেশ দত্ত জয়ঃ

সুপার সাইক্লোন আম্পান কে ঘিরে চাঁদপুরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়। বিশেষ করে দূর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার, অনুসন্ধান ও ত্রাণ বিতরণের জন্যই তাদের এ প্রস্তুতি। তবে জেলার হাইমচর, চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তর নদীতীরবর্তী চর এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় করনীয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে চলছে আলোচনা সভাও।

 

এ প্রসঙ্গে জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা কে বি এম জাকির হোসেন জানান, চাঁদপুর সদরে ১৮ হাজার ৪’শ জনের জন্য ২০টি, হাইমচরের ১১ হাজার মানুষের জন্য ২২টি, মতলব উত্তরের ১২ হাজার ২’শ ৮০ জনের জন্য ৮০ টি, হাজীগঞ্জের ১৫ হাজার ৪’শ ৫০ জনের জন্য ৪৬টি, কচুয়ার ২ হাজার ৪’শ ৯৭ জনের জন্য ১৯টি, শাহরাস্তির ২০ হাজার ৭’শ জনের জন্য ২২টি, ফরিদগঞ্জের ১০ হাজার ৭’শ ৫০ জনের জন্য ৩১টি এবং মতলব দক্ষিণের ১২ হাজার ৩’শ ৮০ জনের জন্য ৮৪টি সাইক্লোন শেল্টার সহ মোট ১ লক্ষ ৩ হাজার ৪’শ ৫৭ জনের জন্য ৩’শ ২৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার মানুষ এবং প্রায় ২ হাজার ৭’শ গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

 

এ ব্যপারে এনডিসি মেহেদী হাসান মানিক জানান, আমরা ২টি উদ্ধারকারী নৌযান সচল রেখেছি। দূর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্ধার অনুসন্ধানের জন্য ভলন্টিয়ার সার্ভিস হিসেবে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ৫০ জন, রোভার স্কাউটের ৪০জন সদস্য এবং জেলা স্কাউটের ৩’শ ৩০ জন সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চর এলাকাগুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রসঙ্গে এনডিসি মেহেদী হাসান মানিক আরো জানান, ১টি নৌ থানা ও ৫টি নৌ ফাঁড়ির মোট ৮১ জন নৌ পুলিশ সহ কোস্ট গার্ডের ৫০ জন সদস্য উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এর সাথে জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজের জন্য ৮টি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদরের অন্তর্গত চরাঞ্চলে ২৭ হাজার ৮’শ ৮০ জন, হাইমচরের ২৬ হাজার ২’শ ৪ জন এবং মতলব উত্তরের ২০ হাজার ৮’শ ৯৪ জন সহ মোট ৭৪ হাজার ৯’শ ৭৮ জনের জন্য ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ রয়েছে। যার মধ্যে সদরে ৩’শ প্যাকেট, হাইমচরে ৫’শ প্যাকেট এবং মতলব উত্তরে ২’শ প্যাকেট সহ মোট ১ হাজার প্যাকেট ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে। সূত্রে আরো জানা যায়, যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেন তাদের জন্য ১’শ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ নগদ টাকা, শিশু খাদ্য কিনতে ১ লাখ টাকা এবং গোখাদ্য কিনতে আরো ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে সিভিল সার্জন ডা. শাখাওয়াত উল্লাহ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সময়ের প্রস্তুতিতে জেলার ৯৩টি ইউনিয়নে ১টি করে এবং ৮ উপজেলা হেল্থ কমপ্লেক্সের আওতায় ৩টি করে ২৪টি সহ সর্বমোট ১’শ ১৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।যারা প্রয়োজনীয় ঔষুধ সরবরাহের জন্যও প্রস্তুত রয়েছেন।

 

জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোঃ নুরুল হক জানিয়েছেন, শহরের লোকজনকে নিজ দায়িত্বে আত্ত্বীয় স্বজনদের বাড়ীতে এবং চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিতে আমরা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছি। তবে অবশ্যই যাতে সামাজিক দুরত্ব ও মাক্স পরে সবাই এই অবস্থান নেয়। সে ব্যপারেও প্রচারণায় সতর্ক করা হচ্ছে।

 

এদিকে জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা শাহ্ মুহাম্মদ শোয়েব জানান, ঘূর্ণিঝড় ও আমাবর্ষার প্রভাবে উপকূলীয় চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। যেজন্য চাঁদপুর জেলাকে এখন পর্যন্ত ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

 

এ দিকে আশ্রয়কেন্দ্রে কোন করোনারোগী ঢুকে পড়ছে কি না? এ ব্যপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। এমনটি জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, আমাদের উপকূলীয় ১৮টি ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত কোন করোনারোগী শনাক্ত হয়নি। তবুও কেউ যাতে করোনার উপসর্গ নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান না করে। সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান জানিয়েছেন, সাইক্লোন শেল্টারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সুপেয় পানি,খাবার ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ গেলে বিকল্প ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলজিইডিকে বলা হয়েছে যেসব অঞ্চলের লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে। সেসব অঞ্চলের সড়ক এবং ব্রিজে কোনো সমস্যা হলে জরুরিভত্তিতে তা মেরামত করতে। এছাড়াও নদী পথে ফেরি পারাপার বন্ধ সহ জরুরি প্রয়োজনে আমরা হটলাইন নম্বর চালু করেছি।

 


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…