বিশেষ প্রতিবেদক:
চাঁদপুরের মতলব-দক্ষিণ উপজেলার সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের মাসিক কর্মী-সমন্বয় সভা ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মতলব-দক্ষিণ উপজেলার ইউএনও মোঃ শাহিদুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন অত্র উপজেলার পুলিশ থানার অফিসার্ ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী মোঃ সগীর আহম্মেদ সরকার। সভায় আরো অংশগ্রহণ করেন ডিস্ট্রক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস এবং ব্লাষ্টের জেলা সমন্বয়কারী মোঃ আমিনুর রহমান। সভায় মতলব-দক্ষিণ, মতলব-উত্তর এবং কচুয়া উপজেলার গ্রাম আদালত সহকারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সভার প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের মাধ্যমে এলাকার সাধারণ মানুষের বিচারিক-সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের কাজে যারা নিযুক্ত আছেন তাদের সর্বোশক্তি দিয়ে মাঠে কাজ করতে হবে। আমরা জানি গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের পিছনে বেশ কিছু অন্তরায় আছে। এলাকার মানুষ যখন দ্বন্দ্ব-বিরোধে জড়িয়ে পড়ে তখন তারা সাধারণতঃ এলাকার সালিশদারদের কাছে কিংবা মুরব্বিদের কাছে ছুটে যায়। আবার কখনো কখনো পুলিশ থানায় আসে। এ ছাড়াও কোন কোন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ এলাকায় সালিশ-দরবার করেন। এ সমস্ত অন্তরায় কাটাতে হলে গ্রাম আদালতের সুবিধাগুলো এলাকার মানুষদের বুঝাতে হবে যাতে তারা বিধি বর্হিভূত সালিশে জড়িয়ে না পড়ে। কারণ, এগুলোর কোন আইনি ভিত্তি নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, সালিশ-দরবারে কোন নথি সংরক্ষণ করা হয় না। এগুলো অনেক সময় বেআইনীভাবে সম্পন্ন করা হয়। তাই, গ্রাম আদালতের প্রচার-প্রচারণা আরো বেগবান করতে হবে যাতে এলাকার মানুষ বিরোধে জড়িয়ে পড়লে তারা সরাসরি গ্রাম আদালতে ছুটে আসেন। গ্রাম আদালতে মামলা দায়েরের ফি খুবই সামান্য। ফৌজদারী মামলার জন্য ১০ টাকা ও দেওয়ানী মামলার জন্য ২০ টাকা মাত্র। এই নামমাত্র ফি দিয়ে বিচারপ্রার্থীগণ অতি সহজে বিচার পাবেন। আইনগতভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ ব্যাপারে সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে যাতে কেউ গ্রাম আদালতে বিচারের নামে অযথা কাল-ক্ষেপন ও হয়রানীর শিকার না হয়।
বিশেষ অতিথি মতলব-দক্ষিণ উপজেলার পুলিশ থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ বলেন, আমাদের পুলিশ থানায় কেউ আসলে আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে পারি না। গ্রাম আদালতের এখতিয়ারাধীন অভিযোগগুলো আমি ফিরিয়ে দিলেও এলাকার কিছু মানুষ এগুলোকে অতি রঞ্জিত করে থানার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করবে এবং বলবে যে, থানা কোন অভিযোগ নিতে চায় না। সুতরাং আমার সদ্ ইচ্ছা থাকলেও আমি কিন্তু আইনগত সীমাব্ধতার কারণে সেটা করতে পারি না। তবে এ ব্যাপারে যদি কোন অফিস আদেশ থাকতো তাহলে আমরা অতি সহজে গ্রাম আদালতের এখতিয়ারাধীন অভিযোগগুলো আমাদের পুলিশ থানায় চলে আসলেও আমরা সেগুলো আবার গ্রাম আদালতেই রেফার করে দিতে পারতাম।
অফিসার ইনচার্জ আরো বলেন, আমরা যদি এলাকার মানুষকে সচেতন করতে পারি এবং গ্রাম আদালতের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা করি তাহলে আমাদের পুলিশ থানায় এলাকার মানুষ ছোট-খাট বিষয় নিয়ে আর আসবে না। এর ফলে আমরা আমাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশী সময় দিতে পারবো। গ্রাম আদালতও সরকারী প্রতিষ্ঠান। সুতরাং ইহাকে সহযোগিতা করা আমাদেরও দায়িত্ব। তিনি চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের পুলিশ সুপারের সাথে চাঁদপুরের গ্রাম আদালত বিষয়ক জেলা কর্মকর্তা নিকোলাস বিশ্বাসের যোগাযোগ হয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার ইতিমধ্যে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যেন আমরা বিভিন্ন ফোরামে গ্রাম আদালতের সুবিধার কথা বলি এবং ছোট-খাট বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষ যেন পুলিশ থানায় না আসে সে ব্যাপারে কার্যকর দক্ষেপ গ্রহণ করি।।