• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

চাঁদপুরের দূর্গাদীতে সম্পত্তি হারানোর আশঙ্কা ! আদালতে মামলা

আপডেটঃ : সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টারঃ
চাঁদপুর সদরের ৯নং বালিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দূর্গাদী গ্রামে প্রায় পৌনে ৪ শতাংশ দখলকৃত জমি হারানোর আশঙ্কা করে আদালতে মামলা করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা নং-৭১৯/২০।মামলাটি দায়ের করেন ওই সম্পত্তির দখলে থাকা দূর্গাদীর মৃত ছফি উল্লার ছেলে মো. ছানা উল্লা দেওয়ান।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, আইন অমান্যকারী পরধনলোভী মৃত জসিম মিজির ছেলে মো. মাসুম মিজি(২৮), মো. মানিক মিজি(২৬), মৃত হাবিব উল্লা মিজির ছেলে মো. মহসীন মিজি(৩৬), মৃত সেকান্তর খানের ছেলে মো. ফারুক আহম্মদ খান (৫৮) সহ একজোটবদ্ধ মাস্তান প্রকৃতপক্ষে ভূমি দস্যু লোক।
মামলার বিবরণ সূত্রে আরো জানা যায়, এই জায়গাটি মামলার বাদী দূর্গাদীর মৃত মো. ছফি উল্লার ছেলে মো.  মো. ছানা উল্লা দেওয়ান(৬০), মামলার সাক্ষী দূর্গাদীর মৃত আমিন উল্লা বেপারীর স্ত্রী মোসাঃ নাছিমা বেগম এবং হান্নান মিজির ছেলে আলমগীর নালিশী ভূমি বিগত ১৪-১১-১১ ইং তারিখে ৮৯৬৪/১১ ইং সাফ কবলা দলিল মূলে ক্রয় করেন। এরপর থেকে নিজ নামে খারিজ খতিয়ান সৃজনক্রমে ওই ভূমিতে দোকান ঘর নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখলে রয়েছেন। অথছ প্রতিপক্ষগণ গায়ের জোরে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে নালিশী এই ভূমি হতে প্রার্থীপক্ষকে বেদখল করার জন্য উঠেপরে লেগেছেন।
বিবাদীগণ গত ২৯শে সেপ্টেম্বর নালিশী দোকান ঘর হতে প্রার্থীপক্ষের ভাড়াটিয়া চাপিলার মো. দুদু ঢালী এবং মন্টু বন্দুকসীর ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম কে জোর পূর্বক বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। ঐ সময়ে তাদের ডাক-চিৎকারে সবাই ছুটে আসলে বিবাদীগণ প্রকাশ্যে নালিশী ভূমি বেদখল করার হুমকি-ধমকি দেন।এখন আমরা নিরাপত্তাসঙ্কট ও সম্পত্তি হারানোর আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছি। মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, নালিশী ভূমিটি ছিলো চাঁদপুরের অধীনস্থ ১১১নং দূর্গাদী মৌজার নামজারী জমা, খারিজ মোকদ্দমা নং-১৯৫৩/১১-১২ইং খারিজী ২৮৮নং খতিয়ানে সাবেক ৩৫৪ দাগে বি. এস. হাল ৫৭২ দাগে অন্দরে ভিটা  . ০৩৮৭ একর ভূমি। যার উত্তরে সরকারি রাস্তা, দক্ষিণে মসজিদের পুকুর, পূর্বে মসজিদ এবং পশ্চিমে ফারুক। এদিকে স্মারক নং-১৫১৫ এর মাধ্যমে চাঁদপুর সদরের সহকারী কমিশনার(ভূমি) ইমরান হোসেন সজীবকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জোরপূর্বক দখল এবং শান্তি ভঙ্গের কোন সম্ভাবনা আছে কিনা? সেটির সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন সার্ভেয়ার কর্তৃক স্কেচম্যাপের মাধ্যমে ১৪ই অক্টোবরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অসীম চন্দ্র বনিক।
এদিকে এ বিষয়ে স্থানীয় উত্তর ইচুলীর মো. ইসমাইল মিয়াজীর ছেলে মো. আরিফ মিয়াজী জানান, এলাকার একটি কুচক্রি সন্ত্রাসী মহল আমার আত্মীয়দের জায়গা জোরপূর্বক দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ওখানকার সাবকবলায় ক্রয়কৃত দোকান ও জায়গা জোরপূর্বক দখল করার জন্য গত ২৫শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার ফরাক্কাবাদ বাজারে বালিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের অর্থ সম্পাদক মো. কবির হোসেন মিয়াজী(৩৮) কে দেড়ঘন্টা আটকে রেখে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। যার পুরো ঘটনা স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মূলত এ ঘটনাটি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাসুম মিজি, মানিক মিজি ও মৃত হাকিমুল্লার ছেলে মহসিনসহ আরো অনেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে তা আদায় করতে ব্যার্থ হয়ে একপর্যায়ে ঘটিয়েছে। যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সদর যুবলীগ, ইউনিয়ন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে এ ঘটনায় দূর্গাদীর আব্দুল হান্নান মিজির ছেলে কবির হোসেন মিজি জানান, এই জায়গাটি চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবী করে দোকানপাট থাকা অবস্থার মধ্যেও জোরপূর্বক তাদের লোক কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে। মূূলত এই ঘটনাটি মোটা দাগে টাকা খেয়ে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর চাঁদপুর সদর শাখার উপ-সহকারী মো. ফারুক আহম্মদ খান স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশ করে এমনটি ঘটিয়েছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। আর তাই একই জায়গাকে সরকারি অফিসের জায়গা দাবী করে দোকানগুলো ঘিরে শুধু কাঁটা তাঁরের বেড়া দেওয়া হয়েছে। অতচ একই স্থানের ছাত্রলীগের অফিসের সামনে কোন কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়নি। যেজন্য বিষয়টি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর এমন অনৈতিক কাজে বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মিজি গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমরা এর একটা সুষ্ঠু সমাধান পেতে আদালতের শরনাপন্ন হয়েছি।
এ ব্যপারে চেষ্টা করেও বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মিয়াজীর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ ব্যপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর সদরের কৃষি অফিসার আয়েশা আক্তার জানান,আমাদের কার্যালয়ের উপ-সহকারী অফিসার মো. ফারুক আহম্মদ খানের ব্যাপারে মামলা হয়েছে কিনা তার কোন নোটিশ এখনো পাইনি। মূলত ওই জায়গাটি হচ্ছে ইউনিয়নের বীজাগার। যেখানে সার ও বীজ রাখার কথা রয়েছে। এটি সারাদেশে ১৯৬২-৬৩ সালে গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে একযোগে প্রায় সব ইউনিয়নেই নির্মাণ করা হয়েছিলো। এটি তৎকালীন সময়ে ব্লক সুপার ভাইজার তথা বর্তমান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অফিস-কাম-বাসস্থান বা বীজাগার হিসেবে পরিচিত ছিলো। সে বীজাগার থেকে তৎকালীন ব্লক সুপার ভাইজারগণ নিয়মিত হওয়ায় কিটনাশক, সার ও প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি সেখানে রাখা হতো এবং কৃষকগণকে সেবা দান ও কার্যাবলী পরিচালিত হতো। কিন্তু অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, গত প্রায় ২০ বছর ধরে উচ্চ বীজাগারটি কৃষি বিভাগ কর্তৃক পরিত্যাক্ত থাকায় উহা ব্যক্তি বিশেষের যদচ্ছা ব্যবহারে পরিণত হয়েছে। এই বীজাগারের ডিজাইন ও নির্মাণ কৌশলই প্রমান করে এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে আয়েশা আক্তার বলেন, আমাদের কাছে এখন কোন কাগজপত্র গোছানো নেই বলে দেখাতে পারছি না। এই জমিটি কৃষি অধিদপ্তরের। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কৃষি অফিসের জায়গা দখলমুক্ত করতে অভিযানে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নেই কৃষি অধিদপ্তরের জায়গা দখলমুক্ত করা হবে। আমরা সরকারি সম্পদ রক্ষায় সব সময় বদ্ধপরিকর।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…