বিশেষ প্রতিনিধি:
১১ জুলাই ২০১৯ সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালতে মামলার অগ্রগতি ও চ্যালেন্জ মোকাবেলা নিয়ে ২য় বারের মত ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমানের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্রাম আদালতের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফ) নিকোলাস বিশ্বাস। প্রসঙ্গতঃ চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারিতে ১ম বারের মত জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মহোদয় একযোগে জেলার উপজেলাগুলোর সাথে সরাসরি এ ধরণের ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, এলাকার মানুষের বিচারপ্রাপ্তী নিশ্চিতকরণের জন্য গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যক্রম কোনভাবেই ব্যাহত করা যাবে না। এভাবে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সমাজের সকল অনাচার প্রতিহত করা হবে। মামলার শুনানী নিয়মিতকরণের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং এলাকার মানুষদের গ্রাম আদালতমূখী করতে হবে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের মূখ্য ভূমিকা নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আজ এই সম্মেলন কক্ষ থেকে আমি জেলার সকল উপজেলার সাথে একযোগে কথা বলতে পারছি; এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদান। জাতির জনকের সোনার বংলা গড়তে হলে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ছোট-খাট বিরোধ থেকেই বড় বড় দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। গ্রাম আদালত সক্রিয় করে এগুলো সেখানেই নিস্পত্তি করতে হবে। এতে এলাকায় শান্তি বিরাজ করবে।
তিনি আরো বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানগণ বিভিন্ন কাজে এলাকার বাইরে থাকতে পারেন অথবা ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। এটা খুবই স্বাভাবিক। এজন্যই গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬ -এর ৫ নং বিধিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যান ১, অথবা ২, অথবা ৩ -কে দিয়ে আদালতের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে যাতে কোনভাবেই বিচারপ্রার্থী জনসাধারণ অযথা কাল-ক্ষেপন ও হয়রাণীর শিকার না হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপি -এর সহায়তায় ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’ চাঁদপুর সহ দেশের মোট ২৭ জেলায় বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের সার্বিক সহায়তা কাজে লাগিয়ে চাঁদপুরের সকল গ্রাম আদালতগুলো সক্রিয় ও কার্যকর করতে হবে। তবে গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (সংশোধন ২০১৩) অনুযায়ী দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত কাজ করবে।
১ম ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের পর প্রকল্পাধীন প্রায় সকল ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানুষ দিন-দিন গ্রাম আদালতমূখী হচ্ছেন। জুলাই-২০১৭ হতে গ্রাম আদালতে মামলা গ্রহণের হিসেব শুরু হয়। ১ম ভিডিও কনফারেন্সের আগ পর্যন্ত চাঁদপুরে প্রতি ইউনিয়নে প্রতি মাসে গড়ে মাত্র ৩.৫ টি মামলা ছিল কিন্তু উক্ত ভিডিও কনফারেন্সের পর গত চার মাসে এর গড় দাড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশী অর্থ্যাৎ ৭.৩ টি মামলা।
গ্রাম আদালতের অগ্রগতি ও চ্যালেন্জ শীর্ষক এই ২য় ভিডিও কনফারেন্সে নিজ নিজ উপজেলার সম্মেলন কক্ষে নেতৃত্ব দেন মতলব-দক্ষিণের ইউএনও মোঃ শাহিদুল ইসলাম, শাহরাস্তির ইউএনও শিরিন আক্তার, কচুয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমন দে, মতলব-উত্তরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুভাষিস ঘোষ, হাজিগন্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী এবং ফরিদগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মমতা আফরিন।
এতে আরো অংশগ্রহণ করেন হাজিগন্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজি মাইনুদ্দীন, কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাজাহান শিশির, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী, মেয়র মোঃ আব্দুল লতিফ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবীবা মীরা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহ্ আলম।
এ সময় নিজ নিজ উপজেলার সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত থেকে জেলার সকল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব এবং প্রকল্পাধীন গ্রাম আদালত সহকারীবৃন্দ জেলা প্রশাসকের সাথে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন মতামত দেন। ভিডিও কনফারেন্সে আরো অংশগ্রহণ করেন গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা তথা ‘ব্লাস্টে’র জেলা সমন্বয়কারী মোঃ আমিনুর রহমান সহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমন্বয়কারীবৃন্দ।।