• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

শাহরাস্তিতে পিআইও‘র যোগসাজসে খাল খনন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করেছে ইউপি চেয়ারম্যান

আপডেটঃ : শনিবার, ৮ মে, ২০২১

শাহরাস্তি প্রতিনিধি:
শাহরাস্তিতে খাল খননের নামে চলছে হরিলুট। প্রকল্প চেয়ারম্যানকে ঘুমে রেখেই ইউপি চেয়ারম্যানের বিল উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। আর এর সাথে জড়িত রয়েছে উপজেলা প্রকল্পন বাস্তবায়ন কর্মকর্তা স্বয়ং।
ঘাস, লতা-পাতা ও জংলা পরিষ্কার করে খাল খনন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবু হানিফের বিরুদ্ধে। অতি দরিদ্রের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার এ প্রকল্প দিলেও বাইরে থেকে নামমাত্র শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে এলাকার ৬৭ জন শ্রমিকের নামে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া জব কার্ড তৈরী করে অর্থ উত্তোলন করেছে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা। খাল খননের নামে ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা সংশ্লিষ্টদের পেটে গেলেও নাব্যতা শূন্য খাল ঠিকই কৃষকের দূর্ভাগ্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বরাদ্দের নামে কাগজে কলমে খাল খনন করে লুটপাটের এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় কৃষকরা। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বিজয়পুর গ্রামের মৃতঃ জাকির মাষ্টারের পুত্র মজিবুর রহমান গত ২৭ এপ্রিল শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, সরকারের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর (ইউজিপিপি) আওতায় রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বিজয়পুর দাইদিঘীর পাড় হতে কেরানী সাহেবের বাড়ি হয়ে মিজি বাড়ি পর্যন্ত খাল পুনঃখননের জন্য ৮০ হাজার ৪শ’ ঘনফুট মাটি কেটে ৬৭ জন শ্রমিকের ২শ’ টাকা হারে ৪০ দিনের মুজুরি ও সর্দার ভাতা বাবদ ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। যা গত বছরের ৩১ অক্টোবর শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বর সমাপ্ত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দায়েরকৃত অভিযোগে চেয়ারম্যান কোন কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
সরেজমিনে ওই প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে খাল খননের কোন চিত্র পরিলক্ষিত হয় নি। এ সময় সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে আসেন এলাকার কয়েকজন কৃষক। তাদের অভিযোগ এই খালে এক ফুট মাটিও কাটা হয়নি। ৫-৬ জন শ্রমিক ২-৩ দিন ঘাস, লতা-পাতা ও জংলা পরিষ্কার করেছে। কোন কাজ না করেই দাইদিঘীর পাড়ে প্রকল্পের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। ভরাট হয়ে একাকার হয়ে গেছে কৃষি জমির মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল।
বিজয়পুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের পুত্র বদিউল আলম জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবু হানিফ নিজের তত্ত্বাবধায়নে ২-৩ দিন ৪/৫ জন শ্রমিককে দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করাতে দেখেছি। শুনেছে এখানে মাটি কেটে খাল খনন করবে, এখন শুনি খনন না করেই কাজ শেষ।
একই গ্রামের মৃতঃ আজিজুর রহমানের পুত্র মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, আমি এই প্রকল্প কমিটির একজন সদস্য। ৪০ দিনের কর্মসূচীর কথা থাকলেও চেয়ারম্যান নোয়াখালীর ৬-৭ জন শ্রমিক দিয়ে ৩ দিন শুধুমাত্র খালের আগাছা পরিষ্কার করিয়েছে। খাল খননের বরাদ্দ হলেও কোথাও খাল খনন করা হয় নি।
প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ খোরশেদ আলম জানান, আমি কাগজপত্রেই প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান। এই প্রকল্পের ভালোমন্দ কোন কিছুই আমার জানা নেই। চেয়ারম্যান নিজে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ২/১ দিন বহিরাগত কিছু শ্রমিক খালের আগাছা পরিষ্কার করতে দেখেছি। ওই সময় চেয়ারম্যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও প্রকল্পের প্রকৌশলীকে কাজ দেখাতে এনেছিলেন। চেয়ারম্যানের আদেশে আমি বিলের কাগজে স্বাক্ষর দিয়েছি। বিল উত্তোলনের বিষয়ে কিছু জানি না। আমি আমার ওয়ার্ডের কৃষক ও সাধারণ জনগনের পক্ষে এই প্রকল্পের পরিপূর্ন বাস্তবায়ন চাই।
এ বিষয়ে রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবু হানিফ জানান, পরপর ২ বছর খাল খননকাজ করেছি। প্রকল্প চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য মোঃ খোরশেদ আলম নিজে কাজ করিয়েছে এবং বিল উত্তোলন করেছেন। অভিযোগকারীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই লোকের কাজই মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সবুজ মিয়া মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি গত অর্থ বছরের কাজ। সরেজমিনে কাজ দেখেছি, কাজের ভিডিও চিত্র রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কাজের ভিডিও চিত্র থাকলেও তিনি তা দেখেননি এবং এ বিষয়ে কথা বলতে তার সাথে অফিসে দেখা করতে বলেন।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…