মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের একটি মাটির রাস্তা ৬০ বছর পর নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাস্তাটির প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে উপকৃত হবে ৪ গ্রামের অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ। এতে করে প্রায় ৮ কিলোমিটার পথের পরিবর্তে মাত্র তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েই বাকিলা বাজারে আসতে পারবে উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামসহ আমির বাজার এলাকার লোকজন।
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের আন্দারভাঙ্গা সন্না গ্রামের ঠাকুর বাড়ি থেকে শুরু করে গোঘরা গ্রাম হয়ে দক্ষিণ শ্রীপুর ও উত্তর শ্রীপুর গ্রাম হয়ে আমির বাজার পর্যন্ত এই মাটির রাস্তাটি অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরেই অবলেহিত ছিল গ্রামীণ এই রাস্তাটি। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে এই রাস্তাটিতে কোন ধরনের কাজ করা হয়নি বললেই চলে।
এতে করে দক্ষিণ ও উত্তর শ্রীপুর গ্রামসহ স্থানীয় আমির বাজারের লোকজনকে প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে বাকিলা বাজারে আসেত হতো। অবশেষে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের ডিও লেটারে রাস্তাটি নতুন করে মাটি দ্বারা নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি রাস্তাটি পাকাকরণের জন্যও ডিও লেটার দিয়েছেন।
আর রাস্তাটি নতুন করে নির্মানের জন্য সার্বক্ষনিক পরিশ্রম করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটওয়ারী। তিনি চেয়ারম্যান পদে তার দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই রাস্তাটি নতুন করে নির্মানের জন্য চেষ্টা করে গেছেন। এ জন্য তিনি সাংসদ ও উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন। অবশেষে তার পরিশ্রম সার্থক হল।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বাকিলা ইউনিয়নের চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাকিলার আন্দারভাঙ্গা থেকে শুরু হয়ে রাস্তাটি দেবপুর রাজারগাঁও সড়কের আমির বাজারে গিয়ে মিলেছে। সম্প্রতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইফসুফ পাটোয়ারীর উদ্যোগে সন্না ঠাকুর বাড়ির সামনে থেকে শুরু হয়ে গোঘরার একাংশ হয়ে শ্রীপুরের আমির বাজার পর্যন্ত ২ হাজার মিটার রাস্তা মাটির কাটার কাজ শুরু হয়েছে। যার কাজের অর্ধেকটাই ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
প্রায় ৬০ বছর আগ থেকে বাকিলা ইউনিয়নের সন্না ও গোগরা গ্রামের একাংশসহ দক্ষিন শ্রীপুর ও উত্তর শ্রীপুরের প্রায় অর্ধলক্ষ জনগন এই সড়ক ব্যবহার করে বাকিলা বাজারে যাওয়া আসা করে থাকে। কিন্তু গ্রামীণ এই সড়কটি সংস্কার বা মেরামত না হওয়ায় দক্ষিণ ও উত্তর শ্রীপুরসহ উত্তর দিকের অন্যান্য গ্রামের লোকজনকে রাজারগাঁও দেবপুর সড়ক ধরে অতিরিক্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার বেশী পথ পাড়ি দিয়ে বাকিলা বাজারে আসতে হতো।
বিশেষ করে এই সকল গ্রামের মানুষের নির্মান সামগ্রী, আসবাবপত্র, অসুস্থ রোগীসহ যেকোন মালামাল পরিবহন করতে হলে প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত পাড়ি দেয়াসহ অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হতো।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, পাকিস্থান আমলের বহু পূর্ব হতে এখান দিয়ে মানুষজন হাঁটাচলা করতো। তখনকার সময়ে ওই সব এলাকার লোকজন বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে চলাফেরা আর শুস্ক মৌসুমে কৃষি জমির পাড় ধরে বাকিলা বাজারে আসা যাওয়া করতেন। আশির দশকে শ্রীপুরের বাসিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আবুল কালাম মাটি কেটে এই সড়কের কিছুটা উন্নতি করেন।
এর পরে জনপ্রতিনিধিগন পর্যায়ক্রমে মাটির কাজ করলেও বড় ধরনের কোন কাজ না হওয়ায় সড়টির স্থায়ীত্ব আনা সম্ভব হয়নি। এতে করে রাস্তাটি ধীরে মাটি ক্ষয়ে সুরু আর নীচু হয়ে গেছে। যার কারনে স্থানীয়রা শুস্ক মৌসুমে পায়ে হেটে আর বর্ষা মৌসুমে চলাচল বন্ধ করে দিতো। সম্প্রতি সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটওয়ারী রাস্তাটি পূর্নাঙ্গ নির্মাণ কাজ শুরু করলে স্থানীয়দের মাঝে আনন্দের বন্যা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে স্থাণীয় শ্রীপুর মাঠের ইরি-বোর প্রকল্পের স্বীম ম্যানেজার তাজুল ইসলাম জানান, প্রায় ৬০ বছর পরে এসে রাস্তাটি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে আমরা আনন্দিত। রাস্তাটি হয়ে গেলে আমাদেরকে আর দেবপুর হয়ে ঘুরে বাড়ি আসতে হবে না। উপকৃত হবে এই এলাকার লোকজন।
গোঘরা হাওলাদার বাড়ির মরহুর আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ হাওলাদের বড় ছেলে বাকিলা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী সৈয়দ আহম্মেদ হাওলাদার জানান, ছোট বেলায় বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া আমরা এই সড়কে চলাচল করতে পারতাম না। এখন যেভাবে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, এতে মাঝারি ধরনের যানবাহন চলাফেরা করতে পারবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবাই রাস্তার কাজ দেখে খুশি (আনন্দ) প্রকাশ করছেন।
সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, রাস্তাটির নির্মাণ কাজে অনেক প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হচ্ছে। তারপরেও যত বাঁধা আসুক এলাকাবাসীর সুবিধার জন্য আমি এর কাজ শেষ করবো।
তিনি জানান, মাটির কাজ শেষ হলেই পাকাকরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারন, রাস্তাটি পাকাকরনের জন্য গত বছর (২০২০) আমাদের মাননীয় সাংসদ মেজর অব.রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম মহোদয় ডিও লেটার দিয়েছেন।