ক্যাপশন : হাজীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ২নং ওয়ার্ড বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি।
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে শীত ও করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি, বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে কেন্দ্র দখল ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলে।
এদিন সকাল থেকেই পৌরসভা ২০টি ভোটকেন্দ্রে আসতে শুরু করেন ভোটাররা। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। এরপর পৌরসভায় ১২টি ওয়ার্ডে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু করেন দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা। শীতের মধ্যে এমন ভোটার উপস্থিতি নির্বাচনকে উৎসব মুখর করেছে।
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টায় বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ভোট গ্রহন বন্ধ ছিলো। এরপর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইপিজ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পিপিএম (বার), বিপিএম (বার) উপস্থিত হয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আবারো ভোট গ্রহণ শুরু করেন।
নির্বাচনে ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১২ জন ম্যাজিষ্ট্রেটের তত্বাবধানে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন ও আনসার সদস্যদের দায়িত্বশীল ভূমিকায় কোন ধরনের অপ্রিতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে বলাখাল জে.এন উচ্চ বিদ্যালয় ও ধেররা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হাতাহাতির ঘটনায় কাউন্সিলর প্রার্থীসহ কমপক্ষে ৩ জন আহত হয়েছেন।
ক্যাপশন : হাজীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ৩নং ওয়ার্ড ধেররা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (র্যাব) তৎপরতা।
ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনের পরিদর্শণ করে দেখা যায়, ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতিতে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন দীর্ঘ হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা বলাখাল জে.এন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার নিয়ে টানাটানি শুরু করে।
এরপর অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছুটে আসলে চারদিকে হট্টোগোল ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ভয়ে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে ছলে যান ভোটাররা। এতে করে বন্ধ হয়ে ভোট গ্রহণ। পরবর্তীতে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখানে পুলিশের লাঠিচার্জে ব্লাকবোর্ড প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী নাসিরের ভাই আহত হয়।
একই এলাকার ১নং ওয়ার্ড ভোটকেন্দ্রে ব্লাকবোর্ড প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আবু তাজের লিটন ভূইয়া প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত হন। প্রায় একই সময় পৌর ৩নং ওয়ার্ডের ধেররা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের প্রার্থী রায়হানুর রহমান জনি প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর হামলায় আহত হন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ২নং ওয়ার্ডের বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ কেন্দ্রে প্রায় ৪০ মিনিট ভোট গ্রহন বন্ধ থাকার পর পর ঘটনাস্থলে পৌছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) ও বিপিএম (বার)সহ চাঁদপুরের পুলিশ মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)। এরপর ওই কেন্দ্রের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে আালোচনা করে প্রায় ৪০ মিনিট পর আবারো ভোট গ্রহন শুরু হয়।
বেলা প্রায় ১টার দিকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্জ আব্দুল মান্নান খাঁন বাচ্চু হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মেয়র পার্কে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন ও উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দিনের উপর অভিযোগ এনে বলেন, তারা ৭টি ভোটকেন্দ্র দখল করে আমাদের (বিএনপি) এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে মারধর করে বের করে দেয়। তবে কেন্দ্র দখল করলেও আমি কিন্তু নির্বাচন বয়কট করিনি। এদেশের মানুষ দেখুক। তারা কি করছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের দিন থেকে ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্টদেরকে ভয়ভীতি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে করে তারা যেন ভোট কেন্দ্রে না আসে। ভোটের দিন সকাল থেকেই আমাদের লোকদেরকে কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেয়া শুরু হয়। ১নং ওয়ার্ড থেকে ৬নং ওয়ার্ড পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে আমাদের লোকদের বার বার বাধা প্রদান করে। ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডে আমাদের এজেন্ট ছিলো না। তাদেরকে ভোটের কয়েকদিন আগ থেকে হুমকি-ধমকি দেয়া শুরু করে সরকারি দলের লোকেরা।
এ সময় আব্দুল মান্নান খাঁন বাচ্চু অভিযোগ করে আরো বলেন, ২৯ তারিখ বিকেল থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি হাজীগঞ্জে সুষ্ঠ ভোট হবে না। তারপরেও দলীয় স্বার্থে বিএনপি নির্বাচনী মাঠে অবস্থানে রয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ধানের শীষ প্রতীকের চীফ এজেন্ট ডাঃ মাজহারুল ইসলাম রনি, পৌর বিএনপির সভাপতি নাজমূল আলম চৌধুরী, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আক্তার হোসেন দুলালসহ দলের বেশ কিছু নেতাকর্মী।
এরপর ধানের প্রতীকের এই প্রার্থী সংবাদ সন্সেলের পর বেলা তিনটায় নির্বাচন নিয়ে ফের একটি বুলেটিন দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলে ও বেলা ৪ টা পর্যন্ত বিএনপি কিংবা প্রার্থীর পক্ষ আর কোন বিষয়ে গনমাধ্যমকর্মীদেরকে অবগত করানো হয়নি।