মনিরুল ইসলাম মনির, মতলব উত্তর (চাঁদপুর) :
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় এখন মাদকের ছাড়াছড়ি। বিপুল পরিমাণ মাদকের চাহিদার কারণে এখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক কারবারির সংখ্যা। আর এ কাজে যুক্ত হয়েছে হিজড়ারা। বিভিন্ন সংস্থার মতে, মতলব উত্তরে হিজড়া মাদকদ্রব্যের কেনাবেচায় জড়িত। এরা মাদক কেনাবেচার পাশাপাশি নিজেরাও মাদক সেবন করে। হাত বাড়ালেই মিলে মাদক। এতে উচ্ছন্নে যাচ্ছে যুবসমাজ। অসহায় বোধ করছেন অভিভাবকরা। তাদের মতে, পুলিশ চোখ বন্ধ করে আছে।
তবে মতলব উত্তর থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা বলেছেন, মাদক কারবারি যে বা যারাই হোক, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি পুলিশের লোক হলেও।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ছেংগারচর পৌরসভার রুহিতারপাড় থেকে ৮শ’ ২০ পিস ইয়াবা, ২শ’ গ্রাম গাঁজা ও মাদক বিক্রির ৭ হাজার ৬শ’ টাকা’সহ হিজড়া সর্দারণী নুপুর আক্তার (২৬) কে আটক করেছে থানা পুলিশ। শনিবার সকালে তাকে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়।
হিজড়া নুপুরের ছত্রছায়ায় ৮-১০জন হিজড়া পৌর এলাকার আশপাশে মাদক বিক্রিসহ চাঁদাবাজি করছে।
হিজড়ারা মাদক ব্যবসায় জড়িত এমন গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে। হিজড়ারা রুহিতারপাড় ও সুজাতপুর এলাকায় ডেরা বানিয়ে মাদক বসবাস করার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করছে। এ কথা তুলে ধরেন বৃহস্পতিবার উপজেলায় এক সভায় চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল। হিজড়াদের মাদক ব্যবসার সাথে সমাজের কিছু লোক জড়িত তাদের ব্যাপারেও এমপি রুহুল বলেন। পুলিশ’সহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যদের এ ব্যাপারে তৎপরতা জন্য নির্দেশ দেন।
এ মাদকের ছোবলে যুবসমাজ হচ্ছে বিপথগামী, নষ্ট হচ্ছে সামাজিক পরিবেশ। চোখের সামনেই কারো সন্তান নেশাগ্রস্ত হয়ে বিপথগামী হয়ে পড়লেও অভিভাবকদের যেন কিছুই করার নেই। তাই মাদক বিক্রি বন্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন মতলব উত্তরের অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক কারবারি জানান, মাদকের ব্যবসা থেকে পিছিয়ে নেই চা স্টল ও মুদিদোকানিরাও। লোক দেখানো দোকানের আড়ালে চলছে তাদের মাদক বিক্রির রমরমা ব্যবসা। মাদকের সহজ লভ্যতায় দিন দিন বাড়ছে প্রাপ্তবয়স্কের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক মাদকসেবীর সংখ্যা। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। এতে তাদের চরিত্রের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। যুবক-যুবতী, ছাত্রছাত্রী, শ্রমিক এমনকি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পথের টোকাইরাও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এ যেন মাদকের এক মরণ খেলা।
মাদকের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রতিটি মিটিংয়েই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে পরিস্থিতি যা তাই থাকছে। করোনা মহামারির পূর্বে কিছু মাদক কারবারিকে ধরলেও পুলিশ এ করোনার সময় মাদক কারবারিদের আটকের জন্য পুলিশের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি বলে জানান সচেতনমহল।
য়েছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল।
হিজড়া মহসিন বলেন, আমাদের সম্প্রদায়ের অনেকেই মাদকাসক্ত- কথাটি মিথ্যা নয়, রীতিমতো মাদক কারবারও পরিচালনা করে তাদের কেউ কেউ। তবে আমাদের সংগঠনের বাইরে আরো হিজড়া রয়েছে, যাদের বেশির ভাগই এসব অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
মতলব উত্তর থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, মাদক কারবারির কোনো জাত বা লিঙ্গ নেই। এই অপরাধীরা সমাজের শত্রু। এদের ছাড় দেওয়া হবে না।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) আহসান হাবিব বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাদের পুলিশ সদস্যরা মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে আবারও একই অপরাধে জড়াচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোনো পুলিশ সদস্য এ কাজে জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।