মনিরুল ইসলাম মনির :
ঝুঁকি নিয়েই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. শাহজালাল ও ডা. ফাতেমা ওয়ালিজা হ্যাপি চিকিৎসক দম্পতি। করোনা সংক্রমণ দিনদিন বেড়ে যাওয়ার পুরো জাতি উদ্বিগ্ন। এমন ঝুঁকির মধ্যেও থেমে নেই তাদের সেবা কার্যক্রম।
মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের আনন্দ বাজারের অন্যতম প্রাইভেট চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ‘মোহাম্মদীয়া ডায়াগনষ্টিক সেন্টার’। এর মালিক ডা. মো. শাহজালাল। ক্লিনিকে তিনি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখেন। করোনার এ সময়ও তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী দেখে যাচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
অপরদিকে তাঁর স্ত্রী ডা. হ্যাপী মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটি শেষ করে গ্রামীন জনপদের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যে কথা চিন্তা করে গাইনী ও শিশু চিকিৎসা প্রদান করছেন। ডা. ফাতেমা ওয়ালিজা হ্যাপি মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ডা. ফাতেমা ওয়ালিজা হ্যাপি সরকারী ডিউটি শেষে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও চেম্বার করেন। এ সময়ে তিনিও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের রোগ সংক্রান্ত এ দুর্যোগকালে দায়িত্ব পালন করছি পেশার দায় থেকে কোনো প্রাপ্তির আশায় নয়। এ সময়ে সাধারণ রোগীদের কথা আমাদের ভাবতে হচ্ছে।
তিনি জানান, মানবসেবার ব্র্রত নিয়ে এ পেশায় এসেছি। এ পেশা সংগ্রামের পেশা। কোন প্রাপ্তির আশায় নয়, সেবার মানসিকতা থেকে এ দায়িত্ব পালন। দেশের এমন মহাসংকটকালে সংগ্রামী পেশার মানুষ হিসেবে পালিয়ে থাকলে রক্ষা পাওয়া যাবে না। পুরো পৃথিবী করোনা ভাইরাস নামের অদৃশ্য শত্রু সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। এ যুদ্ধে আমাদের দেশকে জয়ী হতে হবে।
এ চিকিৎসক দম্পতি দম্পত্তি ২৪ ঘণ্টাই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা সংকটের এই চরম পর্যায়ে এসেও থেমে নেই তাদের স্বাস্থ্য সেবা। তারা নিয়মিত এ উপজেলায় চিকিৎসা সেবা ছাড়াও মোবাইল এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকির মধ্যে তাদের এমন দায়িত্ব পালনে পরিবারের লোকজনও ঝুঁকিতে আছেন।
এমন সংকটকালে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসক এ দম্পতি জানান, মানবসেবা ব্রতের এই পেশার সৈনিক আমরা। জাতির এমন সংকটময় মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারি না। এটা আমাদের পেশাকে অসম্মান ও বিশ্বাসঘাতকতা করার শামিল। তাই যথাসম্ভব সচেতন থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও নিজের ফেইসবুক প্রোফাইল ও লোকাল কয়েকটি ফেইসবুক গ্রুপে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক নানা ধরনের পোস্ট দিয়ে যাচ্ছি।
ডা. মো. শাহজালাল জানান, দেশের এমন সময়ে চিকিৎসকদের দায়িত্বের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। হোক সে সরকারি বা প্রাইভেট। পেশায় তিনি চিকিৎসক। সংকটকালেই চিকিৎসকের যুদ্ধ। এমন যুদ্ধে চিকিৎসকের জয়ী হতে হয়। কোনো রোগী মারা গেলে চিকিৎসকের পরাজয়। এমন সংকট থেকে পালিয়ে থাকলেও পরাজয়। পালিয়ে আমাদের বাঁচার চেষ্টা থাকলে সাধারণ রোগীরা যাবেন কোথায়? তাদের সেবায় অন্তত শপথের দায়বদ্ধতা থেকে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসকদের নৈতিক দায়িত্ব।