অমরেশ দত্ত জয়ঃ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালেয়র অধীন একটি অধিদপ্তর।
দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ, ঔষধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শুল্ক আদায় সাপেক্ষে আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরোধ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এই অধিদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব।
আর এই দায়িত্ব পালনকে নিজের ব্রত হিসেবে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে একের পর এক সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক এ কে এম. দিদারুল আলম।
চলতি ২০২০ সালের ৬ই এপ্রিল চাঁদপুরে যোগদান করেই কর্মগুণে তিনি নজর কেড়েছেন সচেতনসহ সবমহলের। এমনকি করোনাকালেও জীবনঝুঁকি নিয়ে নিজ কর্ম এলাকায় মাদকের প্রবণতারোধে নানা কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক সাঁড়াশি অভিযান।
সূত্র জানায়, দায়িত্ব বুজে নিয়েই এ কে এম. দিদারুল আলম মাদক কারবারির চিহ্নিত রুটে ফাঁদ পাততে শুরু করেন। কিছুদিন পূর্বেও শহরের চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের বাবুরহাট-মতলব রোড় মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছেন। নিজ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে উৎসাহী করে তুলতে দ্রুত সময়ে রেশন পায়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর কার্যালয় সূত্রে দিদারুল আলমের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে জানা যায়, চলতি মাসের ১০ই মে তিনি রাসেল ঢালী(৩০) নামের এক মাদক কারবারি কে ৩’শ পিচ ইয়াবা সহ আটক করেন। যাকে মতলব দক্ষিণ হতে আটক করা হয়। এরপর ১৭ই মে চাঁদপুর সদরের কুমারডুগী এলাকা হতে আবেদ গাজী(৪৩) এবং ওমর ফারুক(৩০) কে ৪’শ পিচ ইয়াবা সহ তিনি আটক করেন।এর পাশাপাশি সময়ে তিনি মসজিদে মাদকের কুফল সম্পর্কে তুলে ধরে আলোচনাও করেছেন। জীবন ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ময়দানে জেলা জুড়ে কাজ করা কার্যালয়ের সকলকে বিতরণ করেছেন করোনাকালীন সুরক্ষা সরঞ্জাম পিপিই।
এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, দেশের বর্তমান ভয়াবহ করোনা মহামারিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক ঘোষিত ১০ দিন ব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান ২৫শে মে থেকে শুরু হয়েছে। সেই বিশেষ অভিযানের ৩য় দিনে ৫ হাজার পিচ ইয়াবাসহ কচুয়া থানার তালতলী গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ীতে তল্লাশী করে ৫’ হাজার পিস ইয়াবাসহ হাসিনা বেগম (৪১) নামের এক মাদক সম্রাজ্ঞীকে তিনি গ্রেফতার করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২৮শে মে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৪র্থ দিনেও তিনি সোহাগ হোসেন গাজী নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে ১’শ ৫০ পিচ ইয়াবাসহ চাঁদপুর পৌর ১৩নং ওয়ার্ডের মঠখোলা এলাকা হতে আটক করেন। যা নিয়ে তার যোগদানের সময় থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৮’শ ৫০ পিচ ইয়াবা অর্থাৎ আনুমানিক ২৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট তিনি জব্দ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এদিকে লোকবল প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই কার্যালয়ে সহকারি পরিচালক ১ জনে ১ জন,পরিদর্শক ২ জনে ১ জন,উপ-পরিদর্শক ২ জনে ১ জন, সহকারি উপ-পরিদর্শক ২ জনে ২ জন, সিপাহী ১২ জনে ১ জন, একাউন্টেন্ট ১ জনের স্থলে পদ শূণ্য, অফিস সহকারী ১ জনে ১ জন, ওয়ারল্যাস অপারেটর ১ জনের স্থলে পদ শূণ্য, আউট সোর্সিং ৩ জনে ৩ জন সহ মোট ২৩ জনের স্থলে ১০ জন লোক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
২৯ শে মে শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক এ কে এম. দিদারুল আলম জানান, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচাররোধে এনফোর্সমেন্ট ও আইনি কার্যক্রম জোরদার, মাদকবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশে মাদকের অপব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করে মাদকের বিস্তাররোধ করার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে পুরো জেলায় আমাদের লোক সেট করে ফেলেছি।আমাদের মূল টার্গেট মাদকের গডফাদার নির্মূল করা।
এ কে এম. দিদারুল আলম আরো জানান,আমাদের লোকবল হয়তো কিছুদিনের মধ্যে বাড়বে। যাদের জন্য আমরা শহরের অদূরে নতুন অস্থায়ী কার্যালয় প্রস্তুত করেছি। আশা করছি পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চাঁদপুরকে মাদকমুক্ত করতে আমাদের সর্বোচ্চ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। আমরা আমাদের কাজ এগিয়ে নিতে গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।