নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে আম্ফান সুনির্দিষ্ট একটি গতিতে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসেনি। এটি কখনও ঘণ্টায় এক/দুই কিলোমিটার এগিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর আগে যে অনুমান করেছিল, তার সঙ্গে মিলছে না। ফলে এটি মঙ্গলবার শেষরাতে আঘাত নাও করতে পারে। বুধবার দুপুরের পর আম্ফান বাংলাদেশে আঘাত করতে পারে।
মঙ্গলবার (১৯ মে) রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ কুদ্দুস।
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে যে বৃষ্টি হচ্ছে, এটা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হচ্ছে। দেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আম্ফান এখনও অনেক দূরে আছে। মাঝে মাঝে এর গতি অনেক কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে কখনো ঘণ্টায় দুই কিলোমিটার, কখনো এক কিলোমিটার, কখনও একেবারে মুভই করছে না (স্থির থাকা)। যার ফলে আমরা যে ক্যালকুলেশন (হিসাব) করেছিলাম, এটা অনুযায়ী এত কিলোমিটার বেগে আসলে ওমুক সময় এটা ক্রস (অতিক্রম) করবে – ওই ক্যালকুলেশনটা ফেইল (ব্যর্থ) হয়েছে। এখন বুধবার দুপুরের পর থেকে হয়তো অতিক্রম করা শুরু করবে।’
অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় (১৯ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ২০ মে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে আম্ফানের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ-ওডিশ্যায় তুমুল বর্ষণ হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভারতের এ দুই প্রদেশের কাছাকাছি এগিয়ে আসা ঝড়ের ভয়াবহ তাণ্ডব বুধবার বিকেলের দিকে শুরু হতে পারে। তার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওডিশ্যায় ঝড়ছে আম্ফান।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস আরও বলছে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।