মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
আগামিকাল রোববার (৭ জানুয়ারী) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠি হবে। নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী ও চারবারের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সাথে দলীয় দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘ঈগল’ প্রতীকের গাজী মাঈনুদ্দিন ও ট্রাক প্রতীকের মো. সফিকুল আলম ফিরোজের লড়াই হবে বলে ভোটাররা জানান।
রাত পোহালেই ভোট। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই নিজেদের সাধ্যমতো প্রচারকাজ চালিয়েছেন প্রার্থীরা। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির অলিগলি পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছেন। প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ছুটে বেড়িয়েছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। করেছেন গণসংযোগ, মিছিল ও পথসভা।
সঙ্গে রিকশা ও ইজিবাইকে করে মাইকে মাইকে ঘুরে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ভোটের প্রচার শেষে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভোটার ও রাজনীতি মহলের অভিমত, লড়াই হবে ত্রিমুখী। কারণ হিসাবে ভোটাররা জানিয়েছেন, দুই উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে পদধারী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ রয়েছেন।
চাঁদপুর-৫ আসনটি হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনটিতে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা হলেন, ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ও চারবারের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।
তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন, স্বতন্ত্র ‘ঈগল’ প্রতীকের প্রার্থী হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাইনুদ্দিন, ‘ট্রাক’ প্রতীকের প্রার্থী রাজধানী কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা আলহাজ¦ মো. সফিকুল আলম ফিরোজ।
প্রচারণায় এই তিন প্রার্থী অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। এর পরেই এবং অপর ৪ প্রার্থীর মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনিত ‘চেয়ার’ প্রতীকের প্রার্থী, দলের চেয়ারম্যান ও হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন মোজাদ্দে নগর ধেররা ইমামে দরবার শরীফের পীর আলাম্মা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী।
অপর তিন প্রার্থী হলেন জাসদ (হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতার) মনোনিত ‘মশাল’ প্রতীকের মো. মনির হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন বিটিএফ মনোনিত ‘ফুলের মালা’ প্রতীকের বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট মনোনিত ‘ছড়ি’ প্রতীকের আক্তার হোসেন। উল্লেখযোগ্য প্রচারণায় তাদের দেখা যায়নি। এর মধ্যে তরিকত ফেডারশনের বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী চাঁদপুর-৪ আসনে নির্বাচন করছেন।
ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ত্রিমূখী লড়াই হলেও নৌকার প্রার্থী মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এগিয়ে রয়েছেন। কারণ হিসাবে তারা বলেন, ‘ট্রাক’ প্রতীকের প্রার্থী শাহরাস্তি উপজেলার বাসিন্দা। তিনি শাহরাস্তিতে উল্লেখযোগ্য ভোট পেলেও হাজীগঞ্জে উল্লেখযোগ্য ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তার সাথে প্রচার-প্রচারণায় ছিলেন, শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিন্টু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান মঞ্জুরুল ইসলাম জুয়েল এবং হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ হেলাল উদ্দিন মিয়াজী। যার কারণে ইতিবাচক হিসাবে শাহরাস্তি উপজেলার উল্লেখযোগ্য ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবার ‘ঈগল’ প্রতীকের প্রার্থী গাজী মাঈনুদ্দিন হাজীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। টানা তিনবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তৃণমূলের নেতা হিসাবে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
তার সাথে আছেন, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক মুরাদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মির্জা শিউলী পারভীন মিলি, জেলা পরিষদের সদস্য মো. বিল্লাল হোসেন ও ফেরদৌসি আক্তার, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ আসফাকুল আলম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও হাজীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার পারভেজ সুজন ও একাধীক ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ নেতবৃন্দ।
যেহেতু আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাঁর সাথে রয়েছেন, সেহেতু হাজীগঞ্জে উল্লেখযোগ্য ভোট পেলেও শাহরাস্তিতে তার উল্লেখ্যযোগ্য ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান ভোটাররা। তবে এক পথসভায় গাজী মাঈনুদ্দিন বলেন, শাহরাস্তির ৬৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১২-১৪টি কেন্দ্রে ঈগল প্রতীকের জয় হবে। আবার শাহরাস্তির চেয়ে হাজীগঞ্জে প্রায় লক্ষাধীক ভোটার বেশি রয়েছেন। সে হিসাবে ব্যতিক্রম কিছু হতে পারে।
এদিকে নৌকার প্রচারণায় ছিলেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন, শাহরাস্তি পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আব্দুল লতিফ, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটা. আহসান হাবিব অরুন, জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান হাজী জসিম উদ্দিন, শাহরাস্তি উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।
নৌকা প্রতীকের বিষয়ে কথা হলে ভোটাররা জানান, হাজীগঞ্জে ট্রাকের উল্লেখযোগ্য ভোট নেই, আবার শাহরাস্তিতে ঈগলের উল্লেখযোগ্য ভোট নেই। কিন্তু নৌকা প্রতীকের হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি দুই উপজেলায় ভোট রয়েছে। সে হিসাবে এবং বীজ গণিতের সূত্র ধরে মাইনাসে মাইনাসে প্লাস। আবার সাধারণ জনসাধারণের মাঝে মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সে হিসাবে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন।
তাহলে কে হচ্ছেন, হাজীগঞ্জÑশাহরাস্তির অভিভাবক ? তার জন্য আগামিকাল ৭ জানুয়ারী রবিবার দিন শেষের অপেক্ষায় থাকতে হবে। নৌকা, ঈগল ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী এবং প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকার অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন। নিয়মিত গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও পথসভায় সরব ছিলেন তারা। তিনজন প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এছাড়াও তাদের কর্মী-সমর্থকরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষেও জয়ের ব্যাপারে আশা রাখেন।