মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্,
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পূজামন্ডপে হামলা ও পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ৪জন নিহতের ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতি দেখতে সরজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। রোববার তিনি ভাংচুরকৃত পূজামন্ডপ পরিদর্শন এবং নিহতদের কবর যিয়ারত ও স্বজনদের সমবেদনা জানান। এর আগে তিনি একটি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে যে ক’জন মন্ত্রী আছে তার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যতম। সে একজন ভালো মানুষ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা। উনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আমি সকল মন্দিরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। অথচ গোয়েন্দা সংস্থা তাকে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বোকা বানিয়ে দিয়েছে। আসলে-তো উনার কথা কেউ শুনেনি। উনি যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থাই করতেন, তাহেল হৃদয় কি মারা যেত.?
তিনি বলেন, যদিও দোষটা আপনার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) না। কারণ, আপনার কথা শুনে নাই এরা (গোয়েন্দা সংস্থা)। আপনাকে মিসলিড করেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মিসলিড করেছে। অতটুকু যদি না করতে পারেন, তাহলে আপনি নিজে আসেন। যেই চারজন মারা গেছে, তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে যান। প্রত্যেক ইমামদের ঢেকে আবেদন নয়, হুকুম করেন, প্রত্যেক আযানের (নামাজ) সময় যেন বলা হিন্দু-মুসলমান ভাই-বোন।
তিনি আরো বলেন, আমি হাজীগঞ্জের পুলিশ ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। তাদের ভুমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তারা একত্রিত হয়ে জিনিসটাকে (হামলা ও সংঘর্ষ) ট্যাকেল দিতে পেরেছে। তা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারতো। কিছু ইয়াং ছেলেদেরকে বিপথে নিয়েছে কিছু মৌলভী ও ধর্মান্ধ ব্যক্তি। আপনারা ঠেকাবার চেষ্টা করেছেন। আপনারা দেশপ্রেমিক সাংবাদিকের কাজ করেছেন। সুতরাং আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, সরকার সকল হিন্দু-মুসলমানের যানমালের নিরপাত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা না হওয়ার একটাই কারণ হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র নেই। সরকারের এখন সময় এসেছে, পদত্যাগের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠণ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের এনে সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এ সময় তিনি সরকারকে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির কর্তৃপক্ষদের আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার কথা জানান।
এ সময় ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ৬৯‘ শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডাঃ নুরুজ্জামান ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমানসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা শহরের দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গত বুধবার রাতে পুলিশ-জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। এ এসময় পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত এবং ৪ জন গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও মিছিলকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৭ জন পুলিশসহ সাংবাদিক ও বেশ কয়েকজন পথচারী আহত হয়েছেন।