• মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন

তৃনমুলের নেতা কর্মীর কারণেই আওয়ামী লীগ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : মাহবুব-উল-আলম হানিফ

আপডেটঃ : রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১

 

নিজস্ব প্রতিনিধি :
দলের প্রতি এত মনোনিবেশ কোথাও দেখি নাই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আজকের সভা। চাঁদপুর জেলা নেত্রী একটু বেশি ভালোবাসে। বিশেষ নজর এবং দুর্বলতা কাজ করে গেছেন। তাঁর এই ভালোবাসার প্রতিদান যেন আপনারা দিতে পারেন এই আশাকরি। আওয়ামী মূল প্রান শক্তিই হচ্ছে তৃনমুলের নেতাকর্মী। এই তৃনমুলের নেতা কর্মীর কারণেই আওয়ামী লীগ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার (২ অক্টোবর) দিনব্যাপী চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সফর উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৃনমুল প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের কোন কর্মকান্ডই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলো না। জয় বাংলার স্লোগানকে তিনি নিষেধ করেছিলেন। অসংখ্য রাজাকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে শহীদদের আত্মার পদদলিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে একে একে ধংস করে এদেশকে পরিচালাতি করেছিলেন। খুঁনি জিয়াউর রহমান লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীকে জেলে ডুকিয়ে খন্ড বিখন্ড করতে চেয়েছিলেন। তার মুখে ছিলো মুক্তিযুদ্ধ আর চেতনায় ও মনে ছিলো রাস্ট্র বিরোধী।
তিনি আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তাকে জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ রূপান্তরিত হয়েছে। আজকে অজস্র উন্নয়নের কাজ হচ্ছে। বিশ্ববাসী আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করছেন। কিভাবে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যাওয়া তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির মুকুট মনি। প্রতিটি সেক্টরে আজকে উন্নয়ন হচ্ছে। চাঁদপুরেও প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন হয়েছে। আজকে এত উন্নয়নের পরেও চাঁদপুরের প্রতিটি আসনে কেন সংকট থাকবে? আমি আশাকরি তৃনমুল কর্মীরা এ সভা থেকে অতীতের সব সমস্যা ভুলে গিয়ে একত্রিত হয়ে দলের জন্যে কাজ করবে। গঠনতন্ত্রকে অনুসরণ করেই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এমপি বলেছেন, আপনারা আছেন বলেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্যভাবে দেশ এগিয়ে চলছে। সব জায়াগায়ই কিছু না কিছু সমস্যার থাকে। আপনাদের দুঃখের কথা ক্ষোভের কথা লিখে দিলেও চলে। নিজেদের সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু সেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে হলে সাংগঠনিক নীতি মেনে চলতে হবে। আমাদের অহংকার করার কিছু নেই। আমরা শেখ হাসিনার কর্মী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া মানুষ। আমরা বুলেটে নয়, ব্যালেটে বিশ্বাস করি। ঐক্য নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি উপকার করতে চাই, ভালো করতে চাই কিন্তু আমাকে দিয়ে যেন খারাপ কাজ না হয়। আমার নেতাকর্মীকে শত্রু ভাবি, নাকি জানের টুকরা ভাবি, সেটা নেতা কর্মীরা ভালো জানেন। আমাদের মধ্যেও ক্রটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। অনেক ভাই আছেন তারা আমাদের নারীকে বোনের চোখেই দেখেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মধ্যে এমন কেউ যেন না থাকে যেন ভোট চাইতে গিয়ে ভোট কমে যায়। আমাদের সামনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আসছে। সেখানে যেন প্রতিযোগিতা থাকে প্রতিহিংসা না থাকে। আগামী নির্বাচনে দলের উপর আস্থা রাখবেন যেন আমরা জয়লাভ করতে পারি। কিছু সমস্যা আছে সেগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। যা কিছু হবে সাংগঠনিক নিয়মের মধ্যেই হবে। বাংলাদেম আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র শ্রেষ্ঠ গঠনতন্ত্র। প্রতিটা জেলায় সব আসনের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। যদি সদিচ্ছার থাকে তাহলে সবসমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আর আমাতের মধ্যে সেই সদিচ্ছা আছে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেছেন, আমরা দল করি সবাই। তৃনমুলের নেতারা আসলে কি পান? তৃনমুলের নেতারা কখনো বিশ্বাস ঘাতকাত করেন না। আমাদের কাজ হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরন করা। জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃনমুলের নেতাদের পছন্দ করেন। তৃনমুলের নেতারা বিশ্বাস ঘাতকতা করেন নি বলেই জননেত্রী আজকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমরা তৃনমুলকে উপরে তুলতে চাই। তাদেরকে সম্মানিত করতে চাই।
প্রধান আলোচক আরো বলেন, পা পিছলে যেন না যায় সেই কাজগুলো আমাদের করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি ভোটও কমে নাই। অধ্যাবশয় করে এবাদত করে এই জায়গায় আমি এসেছি। আমাদের মধ্যে একটি সমস্যা হচ্ছে, সব মানি কিন্তু তাল গাছটা আমার। মানুষ যেন সামনে সালকম দিয়ে পিছনে খারাপ না বলে এই জিনিসটি আমার মধ্যে কাজ করে। আমাদের সৌভাগ্য এই সনকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বাস্তবায়ন হতে দেখেছি।

তিনি আরো বলেন, জনগণের নেতা সবাই হতে পারে না। অহংকারী মানুষ জনগণেরর নেতা হতে পারে না। মানুষকে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার আদর্শ দেন। মানুষকে আলিঙ্গন করুন। কেউ ঠেকানোর থাকবে না আওয়ামী লীগকে। একটু ভাবুন আপনার চারপাশের মানুষ আপনাকে কি বলে? যিনি এতকিছু পারেন তিনি কি জানেনা কাকে মনোনয়ন দিতে হবে? আমার নেতার দোষ যদি নিজেই বলে বেড়াই তাহলে বাহিরের শত্রুর আর দরকার পরবে না। নেতাকে সম্মান করবেন কিন্তু দেবতা বানাবেন না। নেতাকে দেবতা বানিয়ে দেশের সর্বনাশ হচ্ছে। আমরা অনেকসময় নেতাকে দেবতা বানাতে গিয়ে তাঁকে খাটো করে ফেলি। নেতা আমি ক্ষনিকের, কর্মী সারাজীবনের। আমরা সম্মানের সহিত রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই।
সাবেক মন্ত্রী মায়া চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেছেন, মানুষকে খাটো করবেন না। যার যতটুকু প্রাপ্য থাকে তা দিবেন। সংগঠন শক্তিশালী করতে হলে দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। সংসার করতে গেলে আওয়াজ হবেই। তারমধ্যে আওয়ামী লীগের মত বড় দলেও এরকম টুকটাক থাকবেই। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে কেউ কিছু করতে পারবে না। আমাদের কোন শত্রু নাই, শত্রু হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। বিএনপি এখন শুধু টিভির টকশোতেই সীমাবদ্ধ। যদি টকশো থেকে বাদ দেয়া হয় তাহলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সামনের নির্বাচনে নৌকা যে পাবে তার সাথে থাকতে হবে।
মেজর রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি কিন্তু দু’একজনের কারণে আজ আমি এ সভায় দুঃখ প্রকাশ করলাম। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বলছি বাছাই করা দুই একজনের বক্তব্য দিয়ে হাজীগঞ্জ শাহরাস্তির মানুষকে বুঝতে পারবেন না। আমি চাই মানুষের ভালোবাসা। আমার বিশ্বাস এদেশের মানুষ আমাকে আলিঙ্গন করে ধরে নিবে। মহিলাদেরকে আরো প্রতিনিধিত্ব দিতে হবে। যতক্ষণ না নারী শক্তি ক্ষমতায়ন হবে ততদিন বাংলাদেশের পুরোপুরি উন্নয়ন হবে না। আমাদের সুযোগ করে দিতে হবে নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার। পরিশেষে এ সভার সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্যে জেলা আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানাই।
ত্রান ও সমাজ কল্যান সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেছেন, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার অর্জন ম্লান হতে দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচন দেশ রক্ষা, বাঙ্গালী জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নির্বাচন। তাই যাকেই নৌকা মনোনয়ন দেয়া হবে তার জন্যেই আমাদের এক হয়ে কাজ করে যেতে হবে।
তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেছেন, আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেলক্ষে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা রাজনীতি করি আমরা অনেক ত্যাগ করেছি। এদেশটি আমাদের, এদেশ ভালো থাকলে সবাই ভালো থাকবে। আওয়ামী লীগে অপরাজনীতি ভর করার কোন সুযোগ নেই।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল এর সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মুহম্মদ সফিকুর রহমান, চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল ও সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া।
তৃনমুলের প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া কচুয়া মেয়র নাজমুল আলম স্বপন, কচুয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আজিজ শাহিন, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান, মুজিবুর রহমান, মানিক প্রধানিয়া, কচুয়ার মো. শাহাজাহান, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মবিন সুজন, হাইমচরের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজান মিয়া, কচুয়া মাহবুবুল আলম, বোরহান উদ্দিন আহমেদ, কচুয়া জাহাঙ্গীর, আব্দুস সামাদ টুনু, ওয়াহিদুর রহমান, কচুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামরুনন্নাহার ভূঁইয়া , শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মিন্টু, রফিকুল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, চাঁদপুর সদরের সাহিদা বেগম, আবু তাহের, হাবিবুর রহমান পলাশ, মো. ওয়াদুদ প্রমূখ।
তৃনমুলের প্রতিনিধিরা বলেন, কেউ খাবে আর কেউ খাবে না তা হতে পারে না। আমাদের তৃনমুলের নেতাদের খবর কেউ নেয় না। তৃনমুলের নেতারা সবসময়ই বঞ্চিত থেকে যায়। যারা দুঃসময়ে রাজনীতি করেছেন, তারা চাঁপা পড়ে আছেন। ’৯৬ সালের আগে যারা রাস্তায় নেমে রাজনীতি করেছে তাদের মধ্য থেকে খুঁজে বের করেন আওয়ামী লীগ বেঁচে যাবে।
প্রতিনিধি সভার পূর্বে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে শান্তির প্রতিক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সভার শুভ উদ্বোধন করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের বন বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কাজল পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সন্তোষ দাস গীতা পাঠ করেন ।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…