গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ:
কারো বাবা দিনমজুর, আবার কারো মা বাসা বাড়ীতে কাজ করে জীবিকা নির্বারহ করেন। আবার অনেকে রয়েছে পথ শিশু। আর তাইতো এসব শিশুদের কাছে শিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন ছিল অনেকটাই আকাশ-কুসুম। কিন্তু এই শিশুদের কঁচি হৃদয়ে লালন করা সেই স্বপ্নকে বাস্তবতায় রুপদিতে ওই শিশুদের কঁচি হৃদয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে প্রজ্জলন। ফরিদগঞ্জে অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের স্বপ্নজয়ের সারথি খাদিজা তাসনীম প্রতিষ্ঠিত কলেজ পড়ুয়া একঝাঁক শিক্ষার্থীর পরিচালনায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য পাঠশালা“ প্রজ্জ্বলন”।
প্রজ্জ্বলনের উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পাঁচ তরুণ, পরবর্তিতে তাতে যোগদেন কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণ। বৈশ্বিক মহামারি (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস ২০২১ খ্রিটাব্দে কিছুটা স্থির হওয়ারপর শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে কিছু একটা করার চিন্তা মাথায় আসে তাঁদের। তার সেই ভাবনার কথা বাস্তবায়নে স্বপ্নবাজ তরুণরা এগিয়ে আসেন। সবার সঙ্গে কথা বলে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে একটি ভ্রম্যমান স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন এ তরুণরা। স্কুলটির নাম দেওয়া হয় ‘প্রজ্জ্বলন’।
চলতি বছরের শুরুরদিকে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব কার্যালয় চত্ত্বর থেকে যাত্রা শুরু করে প্রজ্জ্বলন। প্রতি শুক্রবারে নিয়মিত কয়েক মাস শিশুদের শিক্ষাদান চালিয়ে যাওয়ারপর তাতে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফের বৈশ্বিক মহামারি (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস। বন্ধ হয়ে যায় দেশের সকল শিক্ষা কেন্দ্র। তার সাথে ফরিদগঞ্জে সুবিদা বঞ্চিত শিশুদের জ্ঞানের আলো চড়ানো এই পাঠশালাটিও বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষা বান্ধব সরকারের মহতি উদ্যোগে দেশে আবারো চালু হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই সাপ্তাহিক ভাবে প্রতি শুক্রবার নিয়মিত পাঠদানে কথা মাথায় রেখে ফের চালু হয়েছে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব কার্যালয় চত্ত্বরে সুবিদা বঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা প্রজ্জ্বলন।
প্রতি শুক্রবার এখানে শিশুদেরকে শিক্ষাদান করানো হচ্ছে। শিশুদের পাঠদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বই,খাতা, কলম-পেনসিল। পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে শিশুদের প্রতিটি ক্লাসে দেওয়া হচ্ছে চকলেট ও নাশতা।
ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব’র সামনে ভ্রম্যমান এ প্রজ্জ্বলন পাঠশালায় দেখা দেখা যায়, শিশুদেরকে পাঠদান করাচ্ছেন প্রজ্জ্বলনের শিক্ষক শামীম হাসান, শিশুদের পাঠ দেখিয়ে দিতে তাকে সহযোগিতা করছেন খাদিজা তাসনীম, পিয়াস দাস, তাওহিদুল ইসলাম রনি, জাহিদ রাছেল, তারেক রহমান তারু, তাহসিন মিলন। এরা সবাই কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
এখানে পড়তে আসা শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই আগে কখনও স্কুলে যায়নি। গেলেও শিশু শ্রেণি কিংবা প্রথম শ্রেণি থেকে অনেকের পাঠ চুকিয়ে গেছে। সংসারের অভাবের কারণে অল্প বয়সেই কেউ আয়-রোজগারে নেমে পড়ত। কিন্তু এই প্রজলন স্কুলে আসার পর থেকে পড়ালেখা করতে ভালোলাগে। স্কুলে এসে পড়ালেখা শেখার সঙ্গে চকলেট ও নাশতা পেয়ে তারা খুব খুশি।
প্রজ্জ¦লনের শিক্ষক শামীম হাসান জানান, আমি মনে করি সমাজে আমরা যারা বসবাস করি আমাদের সকলের দায়িত্ব আছে সমাজের জন্য কিছু করার। দরিদ্র এসব শিশুদের কেবলমাত্র শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি এটি তার ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমরা চাই, আমাদের পাশাপাশি সমাজের আরও মানুষ এ ধরনের ভালো কাজে এগিয়ে আসুক। তবেই সমাজ পরিবর্তনে তার সহায়ক হবে।
প্রজ্জ¦লনের প্রতিষ্ঠাতা খাদিজা তাসনীম বলেন, আমি নিজেও কলেজ পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী, সাথে যোগ হয়েছে গত কয়েক বছরে গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনে কাজ করার অভিজ্ঞতা। গণমাধ্যমে কাজ করার কারনে গরীব-দুঃখী মানুষদের কে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের শিশুদের আর্থিক অভাব অনাটনের কারনে পাঠশালায় না পাঠানো কারনে ওই সব শিশুদের জীবন প্রায় অন্ধকারের দিকে দাবীত হচ্ছে। তাই আমার সহপাঠিতের সাথে যোগাযোগ করে প্রজ্জ্বলন চালু করেছি। এসব শিশুদের পাঠদান দিতে পেরে বেশ ভালোলাগে। পাঠদানের পাশাপাশি তাদের সাথে মজার মজার গল্প করা হয়। তাদের স্বপ্ন সম্পর্কে জানা হয়, আবার তাদের সাথে খেলাধূলা করা হয়।