গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ:
ফরিদগঞ্জে বিভিন্ন খাল-বিলে অবৈধ জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছেন অনেকে। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হয়ে স্থানীয় বাজারগুলোতে মাছের আকাল দেখা দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষার এই মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন বিলে মাছ শূন্য প্রায়। ফলে বাজারে মিলছে না বোয়াল, মাগুর, শিং, কই, ট্যাংরা, শোল, টাকি, পুঁটি, গজার, চাপিলা, খৈইলশা, পাবদা, আইড়, চিংড়ি, মলা, বাইন, বেলেসহ অর্ধশতাধিক মাছ। বিলুপ্তির পথে এসব প্রজাতির মাছ। বিশেষ করে উপজেলা জুড়ে ডাকাতিয়া নদীর মাছ হিসেবে পরিচিত পোয়া, শোল, আইর মাছের দেখা পাওয়া এখন অনেকটাই ভাগ্যের বিষয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজন জানান, নিষিদ্ধ জালের অবাধ ব্যবহার এবং কৃষি জমিতে সার, কীটনাশকের ব্যবহারে উপজেলায় এখন আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া বর্ষাকালে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা মাছের পোনা নিধন হচ্ছে বেশি।
একই এলাকার মোমিন বলেন, শুষ্ক মৌসুমেও মাছ ধরার প্রবণতা বাড়ছে উপজেলায়। এ ছাড়া বর্তমানে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রও কমেছে। এসব কারণে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক মৎস্য সম্পদ আজ বিলুপ্তির পথে।
উপজেলা সদরের আরেক বাসিন্দা রহিম বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই বেয়াল জালে ধরা পড়ছে। এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে। যার কারণে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে গত কয়েক বছর আগে গ্রামের সর্বত্র দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। হাটবাজারগুলোতে চাষকৃত কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, পাঙাশ, আফ্রিকান মাগুর, হাইব্রিড শিং, মাগুর এবং থাই পঁটি, কই, ও তেলাপিয়াসহ নানা ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে। যদিও মাঝে মধ্যে কিছু মাছ বাজারে পাওয়া যায় তাও আবার দাম চড়া। প্রতি কেজি ট্যাংরা, পুঁটিসহ অন্যান্য মাছ ৪০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা রুপসা এলাকার জেলে সুমন বলেন, ‘আমাদের সরকার অন্য কোনো ব্যবস্থা করে দিলে আমরা আর বেয়াল দিয়ে মাছ শিকার করব না। এখন বেয়াল দিয়ে যে কয় টাকার মাছ পাই, তা দিয়ে কোনোমতে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার রুমা বলেন, ইতিমধ্যে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মৎস্য প্রজননেন জন্য ক্ষতিকারক বেয়াল (ভেসাল) জালসহ নিষিদ্ধ জালের বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অর্থনৈতিক মৎস্য সম্পদ রক্ষারস্বার্থে সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নে আমাদের যা করা প্রয়োজন তাই করবো।