মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় জমি ও নির্মিত সেমিপাকা ঘর পেয়ে বেজায় খুশি ভূমিহীন ও গৃহহীন ৯ পরিবার। তাদের চোখে-মুখে এখন হাসির ঝিলিক। ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বপ্নের সেই ঘর সাজানোর কাজে। আর মনের মাধুরি মিশিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার।
যে মানুষগুলো রোদ, বৃষ্টি, ঝড় মাথায় নিয়ে আশ্রয়হীন অবস্থায় কোন রকম দিন কাটাত। সে মানুষগুলো আজ প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে নিজেদের মালিকানার ঘরে বাস করছে। যেখানে রয়েছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। রয়েছে বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা। যা ছিলো এক সময় তাদের কাছে রুপকথার গল্পের মতো। অথচ তা আজ বাস্তব।
সরকারের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ একেকটি ঘর যেন একেকজন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাস্তবে পরিণত হওয়া আকাশ ছোয়া এক রঙ্গিন স্বপ্ন। নিজেদের এক খন্ড জমি। তার উপর পাকা দালানঘর, এটি তারা কখনো কল্পনাও করেনি। তাদের হয়ে সে-স্বপ্ন দেখেছেন, আবার তা বাস্তবায়নও করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের জমিসহ ঘর পাওয়ার আনন্দে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশব্যাপি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের ধারাবাহিকতায় করোনা মহামারীর সকল বাঁধা উপেক্ষা করেনসরকারি প্রাক্কলন ও ডিজাইন মোতাবেক বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ৫টি বরাদ্দ ঘর নির্মাণ করা হয়।
প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর প্রতি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দে ৪ টি ঘর নির্মিত হয়েছে। উপজেলার গ্রোথ সেন্টার থেকে নিকটবর্তী স্থানে যাতায়াতের সুবিধা আছে এমন ২ শতক জমিতে নির্মিত ইটের প্রতিটি ঘরে রয়েছে বারান্দাসহ ২ টি কক্ষ, ১টি রান্না ঘর, ১টি টয়লেট ও ১ টি রান্না ঘরের ব্যবস্থা। এছাড়াও রয়েছে সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা।
সম্প্রতি কথা হয় উপকারভোগী ফারুক হোসেন, সোহেল ও ইমান হোসেনের পরিবারের সাথে। তারা সবাই উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া জমিসহ ঘর পেয়েছেন। তারা আবেগাপ্লুত কন্ঠে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান। তার (ইউএনও) সার্বিক সহযোগিতায় খুব ভালো একটি ঘর উপহার পেয়েছেন এবং নিয়মিত তাদের খোঁজ-খবর নেয়ায় ইউএনও’র প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
উপকারভোগী ফাতেমা বেগম জানান, তার স্বামী ফারুক হোসেন কৃষি কাজ করেন। তাদের নিজস্ব বলতে কোন ভূমি ছিলো না। তাই ২ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ থাকতেন অন্যের বাড়িতে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ২ শতাংশ জমিসহ সেমিপাকা (দালান) ঘরের মালিক। তিনি বলেন, কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবো জানিনা। তবে, তার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ্ যেন তাকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করেন।
পারভীন বেগম জানান, তার স্বামী মো. সোহেল সিএনজি (স্কুটার) ড্রাইভার। নিজস্ব সম্পদ না থাকায় ছিলো না মাথা গোঁজার ঠাঁই। তাই ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ভাড়া বাড়িতে। কিন্তু সড়ক দূর্ঘটনায় স্বামী মারাত্মক আহত হলে, মাথায় যেন তার আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ঘরভাড়া দেওয়া-তো দূরের কথা, দু-বেলার খাওয়া যোগাতেই কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই দূশ্চিন্তায় তিনি কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন তার হিসেব নেই।
অবশেষে হঠাৎ করে যেন আলাদিনের যাদুর চেরাগ হাতে পেয়েছেন বলে জানান পারভিন বেগম। অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২ শতাংশ জমিসহ সেমিপাকা ঘর পাওয়ার বিষয়টি বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। দোয়া করেন, প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি যেন এভাবে অসহায় ও দুস্থদের পাশে আরো বেশি দাঁড়াতে পারেন এবং আল্লাহ্ যেন এসব কাজের উত্তম প্রতিদান দান করেন।
যেহেতু মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই, তাই এখন তারা নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন। আর সে স্বপ্ন হলো, সন্তানদের মানুষ করা, অর্থ্যাৎ ছেলে-মেয়ের উজ্জল ভবিষ্যৎ। সেজন্য সবার দোয়া কামনা করেন তারা।
একই ভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপকারভোগী মো. ইমান হোসেন। তিনি পেশায় একজন রিক্সা চালক। তার কোন সম্পদ ছিলো না। তাই স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে থাকতেন অন্যের বাড়িতে। অবেশেষে এখন তিনি জায়গাসহ ঘরের মালিক। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দুই হাত তুলে দোয়া করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকৌশলী মো. জাকির হোসাইন জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় ক্লান্তিহীন যাত্রায় সব বাঁধা পেরিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলমান। এর মধ্যে আমরা ভূমিহীন ও গৃহহীন ৯ পরিবারকে পূর্নবাসন করেছি। জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং গনমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতায় সততা এবং স্বচ্ছতার সাথে পরবর্তী কাজগুলোও সমাপ্ত করতে পারবো বলে আশা রাখি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার বলেন, বঙ্গবন্ধুর সু-যোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে টীমের প্রতিটি সদস্য এই কাজটি মন থেকে ভালোবেসে, সততা এবং স্বচ্ছতার সাথে করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ঘর করতে গিয়ে খাস জমি নির্বাচন, ঘর নির্মান এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মালিকানার দলিলাদি হস্তান্তর পর্যন্ত এই মহতী কাজের প্রতিটি পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলেই ইতিমধ্যে এই ৯টি পরিবারের মুখে আমরা হাসি ফুটাতে সক্ষম হয়েছি। বাকি চলমান কাজগুলো সবার সার্বিক সহযোগিতা সম্পন্ন করতে পারবেন বলে তিনি বদ্ধ পরিকর।