জিসান আহমেদ নান্নু,কচুয়া ॥
সাধারন কৃষক পরিবারের সন্তান আব্দুল হাকিম। বাবা-মা কষ্ট করে সহায় সম্বল বিক্রি করে বাহরাইনে পাঠান আব্দুল হাকিম কে। এর মধ্যে দু’বার দেশে ফিরে ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ তৃতীয় বারের মতো বাইরাইন যাচ্ছিলেন আব্দুল হাকিম। সিলেট এলাকার জহির ও বাহ্ম্রনবাড়িয়ার মাসুম নামের দুই বন্ধুর প্রতারনার ফাঁদে পড়ে বর্তমানে তিন বছরেরও বেশি বাহরাইনের একটি জেলখানায় বন্ধী রয়েছেন নিরপরাধ আব্দুল হাকিম। তার বন্ধু জহির ও মাসুম আব্দুল হাকিমকে ফোন করে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে একটি ব্যাগ বাহরাইনে নিয়ে আসতে বলে। ওই ব্যাগ নিয়ে বাহরাইন এয়ারপোর্টে পৌছলে ব্যাগে তল্লাসী করে বেশকিছু গাঁজা পেলে তাকে জেলে পাঠান বাহরাইন পুলিশ।
সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার বিকালে বাহরাইনে জেলে থাকা আব্দুল হাকিমের পৈতৃক নিবাস চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৭নং সদর ইউনিয়নের বদরপুর পূর্বপাড়া (নৈয়র পুকুরপাড়) গ্রামে গিয়ে তার পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
জানা গেছে, বদরপুর পূর্বপাড়া (নৈয়র পুকুরপাড়) গ্রামের অধিবাসী সহায় সম্বলহীন কৃষক মো. সিরাজ মিয়ার একমাত্র ছেলে আব্দুল হাকিম (৪০) এর স্ত্রী,২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। তার বৃদ্ধ বাবা মো. সিরাজ মিয়া ও মা জোহরা খাতুন বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পুত্রধবু নাছিমা বেগম,নাতনী রহিমা আক্তার (১১),নাতি আব্দুল আলিম (৬) ও আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩) এর ভরণপোষন চালিয়ে আসছেন। ছেলে জেলে থাকায় নাতি-নাতনিদের নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। কী করলে নিরাপদ ছেলের মুক্তি পাবে তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ নিরীহ পরিবারটি। কান্নায় জড়িত কন্ঠে নিরীহ কৃষক সিরাজ মিয়া ও তার স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলে আব্দুল হাকিম তিন বছরেরও বেশি বাহরাইনের জেলে রয়েছে। আমরা গরীব মানুষ। কিভাবে তার সন্ধান পাবো,কী করলে আমাদের বুকের ধন দেশে ফিরে আসবে তা ভেবে পাচ্ছি না। এসময় তারা ছেলে আব্দুল হাকিম বিনা অপরাধে বাহরাইন জেল খাটছেন দাবি করে ছেলেকে ফিরে পেতে মানণীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
কচুয়া বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ক্বারী মাহবুব এলাহী বলেন, আব্দুল হাকিম আমাদের এলাকার নিরীহ ছেলে। তিনি দেশে থাকতে কখনো বিড়ি,সিগারেট ও অসামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন না। তিনি খুবই কর্মঠ ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। নিরাপদ আব্দুল হাকিমের মুক্তির দাবি জানাই।
বদরপুর গ্রামের অধিবাসী প্রবাসী আনোয়ার হোসেন,প্রতিবেশী মকবুল হোসেন,সাখাওয়াত হোসেন,ইসমাইল হোসেন সহ আরো অনেকে জানান, আব্দুল হাকিম খুবই ভালো মনের মানুষ। দেশে থাকতে বিড়ি,সিগারেট দুরের কথা দোকানেও যেতেন না। নিরিবিলী থাকতেন তিনি। আমরা নিশ্চিত তাকে চক্রান্ত করে এয়ারপোর্টে ব্যাগের মধ্যে সু-কৌশলে মাদকদ্রব্য (গাজাঁ) দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা গ্রামবাসী নিরীহ আব্দুল হাকিমকে দ্রুত মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকার,বাহরাইনে অবস্থারনত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত ও বাহরাইনে অবস্থারত বাংলাদেশী সু-নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করছি।