জিসান আহমেদ নান্নু, কচুয়া ॥
কচুয়া উপজেলার অজোপাড়া গায়ে অবস্থিত রাগদৈল ইমাম মেমোরিয়াল (আই.এম) উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনাম ও সু-খ্যাতির মাধ্যমে আলো ছড়াচ্ছেন কচুয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। কচুয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার উত্তরে দাউদকান্দি ও চান্দিনা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ২শ ২৪ শতক ভূমির উপর তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আলহাজ¦ মরহুম আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টি সুশিক্ষা ও ভাল ফলাফল অর্জনের কারণে উপজেলায় একটি স্বনামধন্য শিক্ষালয় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এ বিদ্যালয়টি। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রায় পাঁচ যুগেরও বেশি সময় ধরে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন এ বিস্তৃত এলাকায়। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্নস্থানে সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অতীতের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে বিদ্যালয়টি আজও সাফল্যের স্বাক্ষর ধরে রেখেছে। বিশেষ করে প্রতিবছর এসএসসি ও জেএসসিতে প্রায় শতভাগসহ খেলাধুলাও সাফল্য রয়েছে। এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অধ্যাপক একে.এম ডা: শহীদুল ইসলাম কচুয়ার সাবেক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রাক্তন শিক্ষার্থী রকিব উদ্দিন আহমেদ ১৯৬১ ব্যাচ বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ন সচিব,ড. মুজিবুর রহমান ঢাকা সাইন্স ল্যাবলেটরি পরিচালক ও সিনিয়র সদস্য ছিলেন। প্রফেসর এম.আতিকুর রহমান চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, ডা: নাজ সোহানী সুলতানা চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্ট মেটারিটি হসপিটাল স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ,জি.এম আতিকুর রহমান ঢাকা মহানগর শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সমিতির সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়াও অসংখ্য শিক্ষার্থী সরকারি বেসরকারি দফতরে দায়িত্ব পালন করছেন। সরেজমিনে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুনাম ও সুখ্যাতি চার দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনায় মহামারীর কারনে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। বর্তমান সময়ে সারাদেশে মহামারি করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি বিধি বিধান মেনে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাসের জোরধারে প্রতিনিয়ত খবরাবর নিচ্ছেন। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিতে সভাপতি হিসেবে সেবা করেছেন যারা, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া (বড়ইয়া কৃষ্ণপুর) ১৯৫৫ থেকে ১৯৯৭, কাজী মো. মোখলেছুর রহমান (বড়ইয়া কৃষ্ণপুর) ১৯৯৭-২০০৫,তৎকালীন ইউএনও নুরুল বাসির (২০০৫-২০০৯),জি.এম আতিকুর রহমান (২০০৯-২০১৪),মো. মোশাররফ হোসেন ফরাজী মহসিন (২০১৪-২০১৬),মো. রফিকুল ইসলাম মজুমদার (২০১৬ থেকে চলমান) সভাপতি ও এডহক কমিটি মিলে চার দফায় তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান সভাপতি বিশিষ্ট সমাজ সেবক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম মজুমদার ১৯৭৩ সালে রাগদৈল আই.এম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচ.এসসি ও ১৯৮২ সালে প্রাচ্যের অক্সেফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স,এমএ অর্থনীতি সাফল্যের সাথে অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালে সোনালী ব্যাংকের নোয়াখালী শাখায় শিক্ষানবিশ অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে সর্বশেষ সোনালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে অবসর গ্রহন করেন। এছাড়াও তিনি সাচার ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ,ঢাবি সিনেট আজীবন সদস্য,সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যারা মো. সিরাজুল ইসলাম বিএ(১৯৫৫-১৯৫৭), বাবু নরেশ চন্দ্র ভৌমিক বিএসসি (১৯৫৭), মনিরুল হক বিএ (১৯৫৭-১৯৫৮),সামছুদ্দিন আহমেদ (১৯৫৮),মজিবুল হক এমএ (১৯৫৮),আব্দুস সামাদ বিকম(১৯৫৮-১৯৫৯),মো. ছিদ্দিকুর রহমান বিএ (১৯৫৯-১৯৬১),আলী আহমেদ বিএ (১৯৬১-১৯৬৪),সৈয়দ মো. আব্দুল কাহার বিএ/বিএড (১৯৬৪-২০০৭), বাবু মনোরঞ্জন দাস বিএ/বিএড (ভারপ্রাপ্ত) ২০০৮, বাবু প্রবোধ চন্দ্র দাস বিএ/বিএড ভারপ্রাপ্ত ২০০৯ ও মনোরঞ্জন দাস (২০০৯ থেকে চলমান দায়িত্বে রয়েছেন)। বিশিষ্ট ব্যাংকার ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. হাবিবুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। বিদ্যালয়টি শিক্ষা-দীক্ষায় ও খেলাধুলায় উপজেলার মধ্যে অন্যতম শীর্ষ স্থানে রয়েছে। মো. জহিরুল ইসলাম ও ডা: রনজিত সরকার বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা চাই। প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন দাস জানান, করোনার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে তাই অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করছি। তিনি আরো জানান, অজো পাড়া গায়ে অবস্থিত বিদ্যালয়টির সুনাম খ্যাতি ধরে রাখতে শিক্ষকদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলেন, তৎকালীন এমন এক সময়ে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে সময়ে এলাকায় শিক্ষার কোন পরিবেশ ছিল না। যারা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে এই এলাকায় শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অর্জন করে দেশ বিদেশে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে এলাকার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।