ক্যাপশণ : হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন এ্যাম্বুলেন্সটি গত ২ বছর ৩ মাস যাবৎ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারনে যান্ত্রিক ক্রটিসহ বিভিন্ন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। -মানবখবর
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালকের অভাবে বিকল হতে বসেছে নতুন মডেলের আধুনিক ও শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত সরকারি এ্যাম্বুলেন্স। গত ২ বছর ৩ মাস যাবৎ এ্যাম্বুলন্সেটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারনে যান্ত্রিক ক্রটিসহ বিভিন্ন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগিরা। কবে নাগাদ চালকের সমস্যা সমাধান হবে তা জানেন না, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র সরকারি এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামতের অযোগ্য হিসেবে ৫ বছর যাবৎ অচলাবস্থায় হাসপাতাল গ্যারেজে পড়ে ছিলো। পরবর্তীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যসেবা জনগনের দৌরগোড়ায় নিশ্চিতকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হয়। যা ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কেন্দ্রিয় ঔষাধাগার (সিএমএসডি), তেজগাঁও, ঢাকা হতে গ্রহণ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এর পরের দিন ২৩ অক্টোবর চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে এ্যাম্বুলেন্সটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু চালকের অভাবে গত ২ বছর তিন মাস যাবৎ ৪ লক্ষ জনগোষ্টির কোন কাজে আসছেনা এ্যাম্বুলেন্সটি। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জেলার মধ্যবর্তী স্থান ও কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এবং রেলপথ, স্থলপথ ও নদীপথের সংযোগ থাকার কারনে পাশ্ববর্তী উপজেলা কচুয়া, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, মতলব ও চাঁদপুর সদর এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার একাংশের জনগণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন এই হাসপাতালে। কিন্তু চালকের অভাবে এ্যাম্বুলেন্সটি অচল থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগিরা। এছাড়াও দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারনে এ্যাম্বুলেন্সের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে করে বিকল হতে বসেছে এই এ্যাম্বুলেন্সটি এবং মারাত্মক দূর্ভোগ ও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সড়ক দূর্ঘটনায় আহতসহ অন্যান্য মুমূর্ষু রোগীরা। বাধ্য হয়ে হয়ে প্রাইভেট গাড়ির খোঁজ করেন, রোগির স্বজনের। এই সুযোগে প্রাইভেট গাড়িগুলোর মালিকরা সরকারি ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৬.৬৩ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে গড়ে ১২ হাজার রোগি সেবা নিয়ে থাকেন। যার মধ্যে অধিকাংশ হচ্ছে, নারী ও শিশু এবং দূর্ঘটনাজনিত রোগি। এর মধ্যে প্রতিমাসে প্রায় দেড় শতাধিক আশংকাজনক রোগিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে রেফার করতে হয়। কিন্তু এ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় এসব রোগির পরিবারের লোকজনকে বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগির পরিবারকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এর ফলে যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় প্রায় সময়ে রোগির প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়াও চালক না থাকায় এ্যম্বুলেন্সটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার পথে। অপরদিকে রোগির স্বজনের হাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রায় সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস.এম সোয়েব আহমেদ চিশতী নিজেও স্বীকার করে বলেন, জরুরি মুহূর্তে রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা না পাওয়াটা কষ্টদায়ক। বিশেষ করে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের লোকদের জন্য। অ্যাম্বুলেন্স চালক পদায়ন হলে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, আমি যোগদানের পরই অ্যাম্বুলেন্স চালক নিয়োগের জন্য সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এ ছাড়া একাধিকবার মৌখিকভাবে তাদের বলা হয়েছে। এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয় বলে তিনি জানান। অপরদিকে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জনের কার্যালয় হতে চলতি বছরের গত ৭ জানুয়ারী এ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি চালকের পদায়ন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ কর্তৃক সাক্ষরিত চিঠির স্মারক নং- সি,এস/চাঁদ/শা-১/২০২১/৫২।