বিশেষ সংবাদদাতা
করোনার বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশটির বাইরে থেকে কোনো হজযাত্রী এ বছরের হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হজ বাতিলের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণ করতে বুধবার দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক (অনলাইন) সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম।
তিনি জানান, সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার টেলিফোনে আসন্ন হজের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ সময় করোনাভাইরাস পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
নূরুল ইসলাম আরও জানান, সার্বিক বিবেচনায় এ বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রী পাঠানো যাবে না। এ কারণে তিনি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি সমবেদনা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
সভার শুরুতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয় এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। সভায় ২০২০ সালের হজ বিষয়ে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বার্তা উপস্থিত সবাইকে অবহিত করা হয়।
সভায় জানানো হয়, করোনা মহামারির কারণে এ বছর পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে গমন করতে পারবেন না। সৌদি আরবে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং সৌদি আরবের নাগরিকদের অংশগ্রহণে সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হবে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যস্থাপনার যেসব প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তি ২০২০ সালের হজের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন তাদের নিবন্ধন ২০২১ সালের জন্য বৈধ থাকবে। নিবন্ধনকারী হজযাত্রীদের জমার টাকা ২০২১ সালের প্যাকেজ মূল্যের সাথে সমন্বয় করা হবে।
নিবন্ধন বাতিলকারী হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের টাকা কোনো প্রকার কর্তন ছাড়াই ফেরত দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের অর্থ সরাসরি হজযাত্রীর অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে। কোনো হজযাত্রীর ব্যাংক হিসাব না থাকলে তার ইচ্ছানুযায়ী চেক বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য জমার অর্থ যাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী সরাসরি ব্যাংক থেকে অথবা এজেন্সির মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রাক-নিবন্ধনের জন্য জমার অর্থ আগের মতো পরিচালক, হজ অফিস, ঢাকা থেকে হজযাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী সরাসরি তার ব্যাংক হিসাবে চেকের মাধ্যমে অথবা এজেন্সির মাধ্যমে ফেরত দেয়া হবে।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী নিবন্ধন বাতিল করে টাকা ফেরত চাইলে তা অনলাইনে অথবা হজযাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী ফেরত দেয়ার জন্য আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অনুরূপ একটি নিবন্ধন বাতিল প্রক্রিয়া প্রস্তুত করে ই-হজ সিস্টেমে সংযুক্ত করা হবে। নিবন্ধন বাতিলে ইচ্ছুক হজযাত্রীদের স্ব স্ব নিবন্ধন কেন্দ্র থেকে নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করতে হবে। আগামী ১৩ জুলাই থেকে নিবন্ধন বাতিলে ইচ্ছুক হজযাত্রীরা আবেদন করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত সফটওয়ার প্রস্তুত ও পরীক্ষার জন্য উপস্থিত সবার সম্মতিতে নিয়োজিত আইটি প্রতিষ্ঠানকে এ সময় প্রদান করা হয়।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো হজযাত্রী পাঠানো হবে না, তাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক কোনো ভ্যাকসিন ক্রয় করা হবে না। এছাড়া ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আহ্বান করা ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র বাতিল করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে হবে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এবিএম আমিন উল্লাহ নূরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনলাইন সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার, কাউন্সিলর (হজ), জেদ্দা, পরিচালক, হজ অফিস, ঢাকা, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের প্রতিনিধিরা অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন।