নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গৃহবধূকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। চারদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূ দিপিকা আচার্য (২৬) মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে আগুন দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বৃহস্পতিবার হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই গৃহবধূর বড় ভাই অরবিন্দ আচার্য। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী, ভাসুর ও শাশুড়িকে আটক করেছে পুলিশ।
হাজীগঞ্জ থানার মামলার সূত্রে জানা যায়, হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বকুলতলা রোডের রঞ্জিত আচার্যের ছেলে বিপুল আচার্য ও তার বড় ভাই সজল আচার্য গত ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে বিপুল আচার্যের স্ত্রী দিপিকা আচার্যকে (মনিকা) শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে রাতে দিপিকাকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরবর্তীতে কুমিল্লা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ওই দিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটি ভর্তি করা হয়। দিপিকার শরীরের ৯২ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানান দিপিকার বড় ভাই অরবিন্দ আচার্য।
গৃহবধূ দিপিকাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার ছোট মাধবদী উপজেলার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে। পারিবারিক ভাবে ১০ বছর আগে বিপুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে।
মোবাইল ফোনে বোনের দুর্ঘটনার খবর শুনে ভাই ঢাকা মেডিকেলে দিপিকাকে দেখতে যান। এ সময় দিপিকা জানান, তাকে মারধর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার করা হয়। এরপর তার ভাই বৃহস্পতিবার দুপরে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিপুলের কয়েকজন বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, বিপুল মাদকাসক্ত। এ কারণে তাদের পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। সে ঘরে বসেই ইয়াবা সেবন করতো।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগির হোসেন রনি।
দিপিকার বড় ভাই মুঠোফোনে জানান, বিপুল আমার বোনের শরীরে আগুন লাগানোর আগে তাকে মারধর করেছে। তার মাথা ও কপাল ফেটে গেছে। বিপুল, সজল, তাদের মা সন্ধ্যা রাণী আচার্য, সজলের স্ত্রী দিপা আচার্য মিলে পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি আরও জানান, যে ঘরে দিপিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে ওই ঘরের দেয়ালের সঙ্গে রক্তের দাগ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে আমার সাড়ে ৩ বছরের ভাগ্নিকে নিয়ে দিপা পলাতক রয়েছেন।
কি জন্য আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টার করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে অরবিন্দ জানান, সজল ও বিপুলদের অনেক টাকা মূল্যের একটি জায়গা আছে। কয়েক মাস যাবত ওই জায়গা বিক্রির চেষ্টা করে আসছে সজল ও বিপুল। আমার বোন দিপিকা ওই জায়গা বিক্রিতে বাঁধা দিয়ে আসছিল। এছাড়া তাদের পারিবারিক কলহ ছিল দীর্ঘ দিনের।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগির হোসেন রনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিপিকা মারা গেছেন। তার শরীরের ৯২ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। হাজীগঞ্জ থানার এসআই সঞ্জয় ঢাকা মেডিকেলে থেকে অরবিন্দ আচার্যের উপস্থিতিতে দিপিকার মৃত্যু পূর্ববর্তী সময়ের বক্তব্য রেকর্ড করেছেন। বক্তব্যে দিপিকাকে আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিপুলের বড় ভাই সজলকে হাজীগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছে আর বিপুল ও তার মা সন্ধ্যা রানী আচার্যকে ঢাকা মেডিকেল থেকে আটক করে রাতে হাজীগঞ্জে নিয়ে আসা হয়েছে। অপর আসামি সজলের স্ত্রী দিপা আচার্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।