গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ:
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ক্রমেই বাড়ছে শিশু রোগী। প্রতিদিনিই আট থেকে ১০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি হওয়া প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুরই জ্বর, সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত।
হাসপাতালের ৩য় তলায় শিশু ওয়ার্ডের সব গুলো শয্যা পরিপূর্ণ হয়ে ইতিমধ্যে মহিলা ওয়ার্ড ও বারান্দায় সিঁড়ির পাশে মেঝেতে শয্যা পেতে কাঁথা-বালিশ দিয়ে করা শয্যায় শুয়ে কান্নাকাটি করছে ছোট ছোট শিশুরা।
রবিবার ১০ অক্টোবর দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিত্র ছিল এমন। চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, ক্রমেই শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে ওই চিত্রের পরিবর্তন হচ্ছে না। ওই দিন ১৩ শয্যার শিশু রোগী ভর্তি ছিল প্রায় ৩০ জন। প্রতিদিনই ৮ থেকে ১০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। চলতি মাসের শুরু থেকে রোগী বাড়ছে। অধিকাংশেরই ঠান্ডাজনিত সমস্যা। হাসপাতালে ডাক্তার ও সেবীকা কম থাকায় এত রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরিফুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক তার ১০ মাস বয়সী শিশু মিনহাজকে নিয়ে তিন দিন পূর্বে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। আরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে ছেলেটির সর্দি হয়। গায়ে হালকা জ্বরও ছিল। ওষুধ খাইয়েও সুস্থ হচ্ছিল না। পরে হাসপাতালে নিয়ে এসে পরীক্ষা করার পর বাচ্চার নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে। ৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কিন্তু কোনো শয্যা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে বিছানা করে থাকতে হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ কেরোয়া গ্রাম থেকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় বহির্বিভাগে ২ বছরের বাচ্চাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছিলেন তামজিদ হোসেন। তিনি বলেন, তিন দিন আগে বাচ্চার জ্বর হয়। স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে, কিন্তু জ্বর কমছে না। বাচ্চার অন্য কোনো সমস্যা হলো কি না, তা নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছেন।
ধানুয়া গ্রাম থেকে আসা শিশু রোগীর মা তাসলিম বেগম জানান, আমার আড়াই বছরের হৃদয়কে নিয়ে আসছি আজকে ৪ দিন হয়েছে। নিয়মিত গ্যাস দিতে হচ্ছে এখন অনেকটা ভালো, ডাক্তার বলছে আরো দু’দিন থাকতে হবে।
দক্ষিণ কড়ৈতলী গ্রাম থেকে আসা শিশু সাদিয়ার মা ফারজানা বেগম জানান, ৩ দিন হয়েছে ভর্তি হয়েছি হাসপাতালে, ডাক্তাররা ভালো চিকিৎসা দিলেও নার্সরা অনেক সময় ডাকলে ঠিকমত আসেনা। তিনি আরো বলেন, ডাক্তারা যে ঔষুধ লেখে তা হাসপাতাল থেকে দেয়না,বাহির থেকে কিনা লাগে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪ হাজার ২৩০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ওই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন সেখানে সেবা নিয়েছে ৪২৩ জন। আর ভর্তি থেকে সেবা নিয়েছে ১০০ জন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহাম্মেদ চৌধুরী জানান, রোগীর চাপ অনেকটা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। এ সময় অভিভাবকদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রচুর তরল ও ভিটামিন সি.জাতীয় খাবার দিতে হবে। বাচ্চারা ঘেমে গেলে জামাকাপড় পরিবর্তন ও ঘাম মুছে দিতে হবে।