গাজী মমিন,ফরিদগঞ্জ:
এক সময়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নিরবাহ করে আরাম আয়েসে সংসার না চালাতে পারলেও অনায়াসে চলতো চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে কয়েকশত জেলেদের জীবন সংসার। কালের বিবর্তনে নদী দূষন ও দখলদারীর কারনে জেলেদের মাছ শিকার প্রায় বিলুপ্তির পথে। এতেকরে অনেক জেলে পরিবারের জীবন চলছে অর্ধহারে অনাহারে, এখন শিংহভাগ পরিবারের সদস্যরা জাল বুনন করে জিবিকা নিরবাহ করছে। অপর অংশ নতুন আয়ের উৎস খুঁজতে দেখা যায়।
এমনিই কয়েকটি পরিবারের ওপর চোখ পড়ছে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধির, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের মরা ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী বেহারীপুর গ্রামে দেখাগেছে হস্তশিল্পে জাল বুনে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পরিশ্রম করছেন কয়েকটি বাড়ীর জেলে পরিবারের নারীরা। এই গ্রামে দাস বাড়ীতে বহুবছর ধরে জেলে সম্প্রদায়ের বসবাস। একসময় এসব জেলেদের আয়-মৎস্য শিকারে ছিলো আয় রোজগারের উৎস। কিন্ত সময়ের ব্যবধানে পরিবারের সকল সদস্যরাই এখন বিভিন্ন কর্মমূখী। পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই নারীরাও। নারীরা এখন সাংসারিক কাজের পাশাপাশি সকল কাজেই অংশগ্রহন করছেন। পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে এখন তারা কুটির শিল্পসহ নানা কাজে অংশগ্রহন করছেন। তবে এদের শ্রমের সঠিক মূল্য না পেয়ে হতাশা গ্রস্থ দেখা গেছে কয়েকটি পরিবারকে।
সম্প্রতি সময়ে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ নারীরাই জাল বুননের কাজ করছেন। কাজ করার সময় শিশু সন্তানদের যন্ত্রণা সইতে হয়। মায়ের আশপাশে ঘুরাফেরা করেন সন্তানরা। তারপরেও কাজে মনযোগী হয়ে জাল বুনে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব জাল বুনন শেষে নারীরা যে পারিশ্রমিক পান, একটি জাল বুননে যে পরিশ্রম করতে হয়,সে তুলনায় তা খুবই সামান্য ।
এদেরকে হস্তশিল্পের বাস্তবমুখী ও বাণিজ্যিক কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করলে উন্নয়নের প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বেহারীপুর গ্রামে হস্তশিল্পের কারিগর দুদনী রানী দাস (৭০)। দুই ছেলে ৩ মেয়ের সংসার জীবনে একটু সুখের ছোঁয়া এনে দিতে সংসারের কাজের পাশাপাশি জাল বুননের কাজেই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকেন। জাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুতা সংগ্রহ করে জাল বুনন শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সুতা ব্যবসায়ীদের । দুই থেকে আড়াই কেজি জাল বুনন করতে সময় লাগে প্রায় এক মাস। কিন্ত পারিশ্রমিক হিসাবে বুঝে পান ১’শত থেকে ১শ’ ৫০ টাকা।
একই গ্রামের অনিমা রানী দাস, স্বরশ্বতি দাস, সন্ধ্যারানী দাস, মিতারানী দাসসহ অধিকাংশ নারীরাই দুদদী রানী দাসের মতই জাল বুনন করছে। মাসে কেউই এক থেকে আড়াই কেজির বেশী জাল বুনন করতে পারে না। পারিশ্রমিক হিসাবে কেউই ২’শত টাকার বেশি উপার্জন করতে পারে না।
তারা জানান, সুতা ক্রয় করে জাল বুনার মত অর্থ না থাকার কারণে জাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুতা সংগ্রহ করে জাল বুনতে হয়।
বেহারীপুর গ্রামটি ঘুরে এসে হস্তশিল্পের এইসব কারিগরদের বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নারীদের কর্মসংস্থান করে দিতেই আমরা কাজ করি,ইতি মধ্যে আমরা নারীদেরকে সেলাই মেশিনের কাজ শিখিয়ে দিয়ে তাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করছি। আমরা খুব অচিরেই ওই গ্রামের মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে কর্মমূখী করে গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করবো।