গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি:
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি গরু চুরির ঘটনায় খামারিদের ভাবিয়ে তুলছে। এতে উপজেলা জুড়ে গরুর খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ তেমনি রাত জেগে পাহারা বসিয়েও রেহাই পাচ্ছে না তারা। সর্বশেষ ২০ জুন রবিবার দিবাগত রাতে অসহায় খামারি আনিছ মিজির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন নিয়ে লালিত, প্রায় লক্ষ টাকার গরুটিও চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। ফলে ঋণ করে একমাত্র গরুটি চুরি হওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে আনিছের পরিবারের।
সরে জমিনে জানা যায়, আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে, ঋণ করা টাকায় কেনা গুরু বাছুরটি বহু কষ্ট করে গরু লালন-পালন করছিলেন। আশা ছিল এবারের ঈদের হাটে তা বিক্রি করে ঋণের বোঝা দূর করবে একই সাথে ভাঙ্গা ঘরটি মেরামত করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পুরন হলো না। রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার ১৫ নং রূপসা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মিজি বাড়ির কৃষক আনিছ মিজির গোয়াল ঘর হানা দিয়ে তার গরুটি লুটে নেয় চোর চক্র।
এই ঘটনার শিকার শুধু আনিছ মিজি নয়, এর আগে গত তিন দিন পূর্বে একই ইউনিয়নের দায়চারা গ্রামে বাবুল হোসেন নামে এক খামারির ৩টি গরু চুরি হয়েছে। গত সপ্তাহে উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামের এক খামারি হুমায়ুনের ২ টি এবং একই গ্রামের অপর একজনের ১টি গরু চুরি হয়েছে। অপরদিকে, গত ১০/১২দিন পূর্বে ৬ নং গুপ্টি ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রাম থেকে ৩ টি গরু চুরি হয়েছে। একেরপর এক চুরির ঘটনায় উপজেলা জুড়ে গৃহপালিত গরুর কৃষক বা খামারির মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে কখন কার গরুটি চুরি হয়ে যায় এই ভয়ে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৬নং গুপ্টি, ১৫ নং রূপসা ও ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে চুরির শিকার খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় ১৫ দিনে এই সব ইউনিয়ন ও আশপাশের গ্রাম থেকে অন্কত ১৫টি গরু চুরি হয়ে যায়। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ইদানীং হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গরু চোর চক্র। সংঘবদ্ধ চোরের দল রাতে গোয়ালে ঢুকে গরু নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। এভাবে একের পর এক গরু চুরির ঘটনায় ঈদ উপলক্ষে মৌসুমি গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
অপর এক খামারি, বেলাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, গরু চুরির কথা কী আর বলব, আমারই তিনটি গরু আছে। কোরবানির সময় বিক্রি করব বলে পালছি। এখন চোরের ভয়ে রাত জেগে সে গরু পাহারা দিতে হচ্ছে।
৬নং গুপ্টি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শরীফ হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন থেকে বেশ কয়েকটি গরু চুরি হয়েছে ইতি মধ্যে। খামারিরা রাত জেগে গোয়ালঘর পাহারা দিয়েও চুরির কবল থেকে গরু রক্ষা করতে পারছেন না।’
১৫ নং ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, গরু চুরির ঘটনার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি, দেখি আমি গ্রাম পুলিশদের দিয়ে পাহারান ব্যবস্থা করছি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, গরু চুরির ঘটনা জানতে পেরে আমি সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি, এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেক পোষ্টের ব্যবস্থা করেছি ইতি মধ্যে। তাছাড়া গরুর খামারিরাও আরেকটু সতর্ক হলে চুরির ঘটনা কমে আসবে বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, রূপসা যে চুরির ঘটনাটি ঘটেছে এলোকটি খুবই অসহায়, লোকটিকে আমার উপপুলিশ পরিদর্শক আর্থিক সহযোগীতা করে আসছে। চোর চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযানে সফলতা আসবে।