মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মাহমুদা আক্তার নামের এক পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকার মাত্র ৩ হাজার টাকার লোভে বলি হলেন ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী মা। তিনি হাসপাতালে না পাঠিয়ে নিজ বাড়ীতে ডেলিভারী করান হাফসা আক্তার নামের গর্ভবতী তরুণী মাকে। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই প্রসূতি মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। শুক্রবার দিবাগত রাতে এই প্রসূতি মা মারা যান।
এর আগে এদিন বিকালে উপজেলার বাকিলা ইউনিয়ন ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পাশে অবস্থিত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা মাহমুদা আক্তারের নিজ বাড়ীতে হাফসা আক্তারের ডেলিভারী করানো হয়। তিনি সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত। নিহত হাফসা আক্তার হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের সাতবাড়ীভাঙ্গা গ্রামের প্রধানীয়া বাড়ীর আবুল হাশেমের মেয়ে এবং একই ইউনিয়নের লোধপাড়া গ্রামের বেপারী বাড়ীর প্রবাসী আব্দুল মালেকের স্ত্রী।
নিহতের মা হাছিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, টাকার লোভে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মাহমুদা আক্তার জোরপূর্বক তার মেয়েকে নিজ বাড়ীতে ডেলিভারী করান। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে অজ্ঞাণ হয়ে যায় হাফসা। তড়িঘড়ি করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার কথা বলে তাদেরকে বাড়ী থেকে বের করেন তিনি। এরপর চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে, সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান হাফসা।
তিনি বলেন, মেয়ের আর্তনাদ ও ডাক-চিৎকার দেখে আমরা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছি, কিন্তু মাহমুদা আমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার (গালমন্দ) করেছে। তিনি একটি রুমে মেয়েকে ডেলিভারী করান, আমাদেরকে তার ধার-কাছেও যেতে দেননি। এরপর সন্তান প্রসবের পর হাফসা অজ্ঞান হয়ে গেলে, তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। তারপর আমরা তাকে জোরপূর্বক ৩ হাজার টাকা দিয়ে চাঁদপুরে নিয়ে যাই। তিনি আরো বেশি টাকা দাবী করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে প্রসব ব্যথা উঠে হাফসার। তারপর বাকিলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা শাহনাজ আক্তারকে ফোন দিলে, তিনি ছুটির দিনের (শুক্রবার) কথা উল্লেখ করে বিষয়টি এড়িয়ে যান। কিন্তু তীব্র প্রসব ব্যাথা হওয়ায় শুক্রবার সকালে হাফসাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসেন তার স্বজনেরা। এখানেও অনেক কথা বলেন শাহনাজ আক্তার।
তারপর শাহনাজের কাছ থেকে চাবি নিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দরজা খুলেন হাফসার বাবা আবুল হাশেম। প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পরও শাহনাজ আক্তার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না আসায়, হাফসাকে পার্শ্ববর্তী রামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শীকা মাহমুদার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। মাহমুদার বাড়ী বাকিলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশেই অবস্থিত।
মুঠোফোনে কথা হয় মাহমুদার সাথে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শুক্রবার সকালে আমার কাছে নিয়ে আসলে ফেরত দেই। পরে আবার বিকালে নিয়ে আসলে নরমাল ডেলিভারিতে হাফসার পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরপর সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে, আমি তাকে চাঁদপুর হাসপাতালে রেপার করি।
এ দিকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হওয়ার পরও স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে না পাঠিয়ে বাড়ীতে কেন ডেলিভারী করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি মাহমুদা আক্তার।
শাহনাজ আক্তারও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাফসাকে নিয়ে আসলে তার স্বজনদের কাছে আমি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্রের দরজা খোলার জন্য চাবি দেই। এরপর আমি প্রস্তুত হতে এবং পিপিই পড়তে একটু সময় লেগে যায়। পরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে দেখি তারা (হাফসা ও তার স্বজনেরা) নেই।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. এম.এ গফুর মিয়া জানান, অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী মাহমুদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা জানান, শাহনাজের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মাহমুদার বিষয়ে তিনি বলেন, জানামতে এর আগেও তাকে দায়িত্ব অবহেলার দায়ে সর্তক করা হয়েছে।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. মো. ইলিয়াছ মুঠোফোনে জানান, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, এর আগেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা মাহমুদা আক্তারকে কয়েকটি বিষয়ে সর্তক করা হয়েছে। এবং তাকে শোকজও করা হয়েছে।