নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র রমজান মাসের অধিকাংশ দিন দেশের শেয়ারবাজার দরপতনের ধারায় থাকলেও ঈদের আগের শেষ তিন কার্যদিবসে বড় উত্থানের দেখা মিলেছে। বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখীতা ঈদের পরও অব্যাহত থাকবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত বিশেষ তহবিল পুনঃবিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়তে সংশোধন করা হয়েছে এক্সপোজার।
পাশাপাশি নতুন আইপিও আবেদন নেয়া বন্ধ করা হয়েছে। প্লেসমেন্ট শেয়ারে তিন বছর লকিং (বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা) রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তারা বলছেন, তিন মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। সম্প্রতি টানা দরপতনে শেয়ারবাজারের সূচক যেভাবে পড়েছে, তাতে যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক বিষয়।
ঈদের পরে কেমন শেয়ারবাজার প্রত্যাশা করছেন- জানতে চাইলে বিনিয়োগকারী মো. সোহাগ বলেন, সম্প্রতি বাজারের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে ঈদের আগে কিছুটা হলেও বাজারে চাঙাভাবের দেখা মিলেছে। আমাদের প্রত্যাশা ঈদের পরও যেন এমন অবস্থা অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। রোজার মাসের প্রায় পুরোটাই বাজার মন্দার মধ্য দিয়ে গেছে। ঈদের খরচ জোগাড় করতে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করেছি। পোর্টফোলিওতে যেসব শেয়ার আছে তাতেও লোকসানে আছি। ঈদের পর বাজার ভালো না হলে পথে বসতে হবে।
মনির হোসেন নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি শেয়ারবাজারের জন্য বেশকিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে সরকার শেয়ারবাজারের প্রতি মনোযোগী। শোনা যাচ্ছে বাজেটেও বেশকিছু প্রণোদনা দেয়া হবে। এতে আমরাও আশায় বুক বাঁধছি ঈদের পর বাজার ভালো হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি শেয়ারবাজার উন্নয়নে বিএসইসি বেশ তৎপর হয়েছে। ২০১০ সালের মহাধসের সময়ও বিএসইসিকে এতটা তৎপর দেখা যায়নি। এখন দেখার বিষয় বিএসইসি যেসব পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলো কতোটা বাস্তাবায়ন হয়।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে নিরব দরপতন হয়েছে তাতে অনেক বিনিয়োগকারী পথে বসার উপক্রম। আমার পোর্টফোলিও দেখলেই তা বুঝতে পারবেন। যে কয়টি কোম্পানির শেয়ার আমার কাছে আছে তারা সবগুলোরই দাম কমেছে। এভাবে দরপতন চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের বাজারের ওপর কোনো আস্থা থাকবে না।
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি আশা করছি। তবে সম্প্রতি যে দরপতন হয়েছে, তার কোনো যুক্তিসংগত কারণ আমি দেখি না।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়শনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত বিশেষ তহবিল পুনঃবিনিয়োগ এবং ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইপিও, প্লেসমেন্ট, বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পরিচালকদের শেয়ার ধারনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। বাজেটেও বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হলে বাজেটের পর শেয়ারবাজার ভালো হবে বলে আমরা প্রতাশা করছি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, শেয়ারবাজার কখন ভালো হবে, আবার কখন খরাপ হবে তা বলা সম্ভব না। তবে বাজারের জন্য সম্প্রতি বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।