স্টাফ রিপোর্টার : পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭৮ উপজেলায় আজ ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এ ভোটগ্রহণ। এ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোট ২৮ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম দেখা গেলে, তাৎক্ষণিকভাবে সেই কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা মনে করি উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে একটি স্থানীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রার্থীরা যথেষ্ট তৎপর থাকেন। তারা সেভাবে প্রচার করেছেন, ক্যাম্পেইন করেছেন। উপজেলা নির্বাচনে উপস্থিতির হার অনেক বেশি হবে বলে আশা করি।
আপনি বললেন যে, কর্মকর্তারা দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন গেল, এর আগে জাতীয় নির্বাচন গেল। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কি কোনো নজির আছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘অনেক সময় কিন্তু হয়েছে। একেবারে যে হয়নি, তা নয়। অনেক সময়, বিভিন্ন সময়ে আমরা করেছি। স্পেসিফিক যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৮৭ উপজেলার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরবর্তীতে আদালত ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ৬টি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩টি উপজেলায় সকল পদে নির্বাচিত হওয়ায় ৭৮ উপজেলায় ভোট হবে প্রথম ধাপে।
আদালতের নির্দেশে বন্ধ হওয়া উপজেলাগুলো হলো রাজশাহী বিভাগের পবা, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া। জামালপুরের মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা এবং নাটোরের সদর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান- এই তিন পদে জয়লাভ করেন বিধায় এখানেও ভোট হবে না।
অন্যদিকে ন্যায়সংগত, নিরপেক্ষ ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে নেত্রকোনার পূর্বধলা, লালমনিরহাটের আদিতমারী এবং সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভোট স্থগিত করেছে ইসি। তা ছাড়া নীলফামারী সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। তবে ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে এই উপজেলায় ভোট হবে।
যে ৭৮ উপজেলায় ভোট হবে সেগুলো হলো- রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় সদর উপজেলা, আটোয়ারী, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া; কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলা; নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা এবং লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলা।
ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর সদর, সরিষাবাড়ী, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা এবং নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, দুর্গাপুর, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়া, কলমাকান্দা ও মদন উপজেলা।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা এবং হবিগঞ্জ সদর, বাহুবল, মাধবপুর, চুনারুঘাট, লাখাই, নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা।
রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর ও তাড়াশ উপজেলা; জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলা; নাটোরের বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও সিংড়া; রাজশাহী জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা।
ইসির তথ্য মতে, ৭৮ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র পাঁচ হাজার ৮৪৭টি। প্রথম ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে চেয়ারম্যান ২০৭ জন, ভাই চেয়ারম্যান ৩৮৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান ২৪৯ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২১৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭৩ জন পদে প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এই উপজেলা নির্বাচনে ২৪ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ১২ জন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ১২ জন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ৯৪ জন দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪৬ জন এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ৪৮ জন।
আর সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। তাদের মধ্যে অস্ত্রসহ একজন পুলিশ, অস্ত্রসহ একজন আনসার (পিসি), অস্ত্র/লাঠিসহ একজন আনসার (এপিসি), আনসার সদস্য ১০ জন (লাঠিসহ) এবং একজন চৌকিদার/দফাদার (লাঠিসহ)।
গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। তাদের মধ্যে অস্ত্রসহ দুইজন পুলিশ, অস্ত্রসহ একজন আনসার (পিসি), অস্ত্র/লাঠিসহ একজন আনসার (এপিসি), আনসার সদস্য ১০ জন (লাঠিসহ) এবং এক থেকে দুইজন চৌকিদার/দফাদার (লাঠিসহ)।
ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গতকাল শুক্রবার থেকে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্তও নিয়োজিত থাকবেন।