গাজী মমিন, চাঁদপুর (ফরিদগঞ্জ) প্রতিনিধি:
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গভীর রাতে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রোগী। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ আগস্ট শুক্রবার রাতে। ঘটনার শিকার হয়েছেন পৌর এলাকার সাফুয়া গ্রামের আ. রশিদ (৬০) নামের এক বৃদ্ধা। এছাড়াও হাসপাতালে জরুরী ফোন নাম্বারে একাধিকবার কলদিয়েও কাউকে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রোগীর স্বজনেরা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দৃষ্টি কামনা করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা গ্রহণের দাবী স্থানীয় সচেতন মহলের।
মৌখিক অভিযেগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগি ও তার স্ত্রী’র সাথে কথা বলে যানা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে আ. রশিদ (৬০) নামে ওই বৃদ্ধা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শারিরিক অবস্থার অবনতি দেখে পরিবারের লোকজন রাতেই অজ্ঞান অবস্থায় রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসকের সহকারী (স্যাকমো) অলি আহমদ রোগীর দু‘গালে থাপ্পড় ও মাথায় কিল-ঘুষি দিয়ে এত রাতে বিরক্ত করার জন্য অশোভন আচরন করতে থাকে বলে অভিযোগ করেন রোগী আ. রশিদের স্ত্রী জাহানারা বেগম।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা হাসপাতাল গেইটে এসে দেখতে পাই গেইট বন্ধ অত:পর আমাদের বাড়ির সাংবাদিক জাকির হোসেন সৈকত কে জানালে তিনি হাসপাতালের বড় ডাক্তারকে ফোন করে বলার পর গেইট খুঁলে দেয়। রোগীর জন্য হুইল চেয়ার চাইলে না দিতে স্বীকৃতি জানান। পরে আমরা রাতে ডিউটিতে থাকা দারোয়ানের কাছে সহযোগীতা চাইলে সহযোগীতা না করে দারোয়ান চলে যায়। আমরা জরুরী বিভাগে নিয়ে শোয়ানোর পর দায়িত্বেথাকা স্যার বলেন,এতরাতে বড় স্যারকে কে দিছে? একথা বলে ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর দু‘গালে ও মাথায় কিল ঘুষি দিতে থাকে, এত রাতে বড় স্যারকে ফোন দিলি কেন? জাহানারা আরো বলে, আমরা নিরুপায় হয়ে হাসপাতালে আসলাম অথচ আমার সামনেই আমার স্বামীকে এভাবে কিলাইলো।
এ বিষয়ে সংবাদকর্মী জাকির হোসেন সৈকত জানায়, আমি রোগীর পক্ষে রাতে ১০/১৫ বার হাসপাতালের জরুরী নাম্বারে ফোন দিলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহাম্মেদ চৌধুরীকে ফোন করে জানানোরপর রোগীকে বিতরে প্রবেশ করতে দেয়।
চিকিৎসা সেবকদের দায়িত্বের অবহেলার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদকর্মী আরও বলেন, আমি জররী নাম্বারে এতবার কলদিয়েও কাউকে পাইনি, এবং আমার বাড়ীর রোগীর সাথে এ আচরণ করারপর আমরা বিষয়টি জেনেছি। নিশ্চিয় মানুষতো আরো হয়রানি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে এনে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাই।
ঘটনার পরেরদিন এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবগত করলে, তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে রোগীর স্ত্রী জাহানারা বেগম ও স্যাকমো অলি আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অভিযুক্ত অলি আহমদ রোগীকে কিল- ঘুষি দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তার ভুল হয়েছে বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশ্রাফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঘটনার বিষয় অবগত হয়েছি। তারপরেও আমি সিসিটিভির ফুঁটেজ দেখে সত্যতার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। তিনি আরও বলেন, আমি ফোন দিয়েছি জরুরী বিভাগে দায়িত্বে থাকা ডাক্তার মাসুদকে আমিতো স্যাকমো অলিকে ফোন দেইনি। সে কি করে জানলো ?
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরিকে তাৎক্ষনিক বিষয়টি জানানো হয়েছে, তিনি বলেন বিষয়টি খুবই দু:খ জনক। আমি এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলবো।
বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সিভিল সার্জন) ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেনের মুঠো ফোনে বক্তব্যে জানান, আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।