• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন

যুগে যুগে মহামারী দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত মানুষ

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০

গাজী সালাহউদ্দিনঃ-
দুর্যোগ পৃথিবীর মানুষের পিছু ছাড়েনি। কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনো মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ, কখনো মহামারী, কখনো দুর্ভিক্ষ এগুলি একের পরে এক মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে চলেছে। যে কারণে এ ভূখন্ডে ভালো নেই মানুষ। পৃথিবীর সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই মানুষ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে টিকে আছে। সময়ের বিবর্তনে মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে গিয়ে বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। আর এভাবেই টিকে থাকার চেষ্টা করছে মানুষ। আদিম যুগ, প্রস্তর যুগ, মধ্য যুগ পেরিয়ে আজকের আধুনিক যুগে এসেও মানুষকে মাঝে মধ্যে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের শিকার হতে হচ্ছে। এসব দুর্যোগে বিভিন্ন সময়ে অকাতরে প্রাণ হারাতে হচ্ছে সমাজের মানুষকে। যুগে যুগে অনেক কঠিন রোগকে পৃথিবীর মানুষ মোকাবেলা করতে হয়েছে। যেমন – প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরা, যক্ষা, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া এবং আরো অনেক কঠিন কঠিন রোগ। সময়ের ব্যবধানে অকাতরে কোটি কোটি লোকের মৃত্যু হয়েছে। সেইসাথে মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকারও হতে হয়েছে। মহামারী পরবর্তী সময়েও সেখানে কোটি কোটি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে ১০৮ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিভিন্ন মহামারী ইত্যাদি কারণে পৃথিবীতে ১৮২৮ টি বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে শুধু ইংল্যান্ডেই ৯৫ টি বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করেছেন। একই সময়ে দুর্ভিক্ষে চীনে৪৫ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়েছিল।
১৪০০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীতে মারা গেছে প্রায় ১০ কোটি মানুষ।
১৭৬৯ থেকে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পলাশীর যুদ্ধে প্রায় ১৩ বছর পর ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে ভারতবর্ষে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
উনিশ শতকের প্রথমদিকে মক্কায় পবিত্র হজ্বব্রত ৯০ হাজার মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়।
১৯০০ সাল থেকে ১৯২০ এর মধ্যে কলেরা ও ডায়রিয়ায় ভারতবর্ষে প্রায় ৮০ লক্ষ লোক মারা গিয়েছে।
১৮৩১ সালে কলেরায় ইংল্যান্ডে প্রায় ১লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছে।
১৮৪৫ সালেও হাঙ্গেরিতে কলেরায় মারা যায় প্রায় ১ লক্ষ লোক।
১৯ শতকে শুধু যক্ষ্মারোগে বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পৃথিবীতে ম্যালেরিয়া রোগে প্রায় ১২ কোটি লোক মৃত্যুবরণ করেছে। এরমধ্যে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের ১০ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করেছেন।
সর্বশেষ ২০১৯ এর শেষের দিকে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯ অর্থাৎ করোনা আক্রান্ত হয়ে বিশ্ব প্রায় বিপর্যস্ত। চীনের উহান প্রদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে সারাবিশ্বের সংক্রমিত হয়। এ করোনা ভাইরাসের আক্রমণে সারা বিশ্বে একদিকে যেমন মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষের।অন্য দিকে বিশ্বের সাজানো-গোছানো অর্থনীতিও ভেঙ্গে পড়েছে। এর সংক্রমণে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর পাশাপাশি কোটি কোটি মানুষ বেকারত্বের শিকার হয়েছেন। ওয়ার্ল্ডওমিটারসের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সারাবিশ্বে ৩০ জুলাই মঙ্গবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টা পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ৫ লাখ ৯ হাজার ১০৬ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৫৭ লাখ ৩ হাজার ৮০৮ জন।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালে সংঘটিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে প্রায় ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।
এভাবে যুগে যুগে বিভিন্ন সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারীতে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের চেষ্টায় পরবর্তীতে বিভিন্ন ঔষধ আবিষ্কারের ফলে মানুষ এসকল মহামারী থেকে পরিত্রান পেলেও ধর্ম -বর্ণ, জাত -গোত্র বৈষম্যে প্রতিক্রিয়াশীল মানুষের মধ্যে দেশে দেশে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে। যুগের পর যুগ এতেও বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটছে প্রতিনিয়ত।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বিগত সময়ে মহামারী গুলো নিরাময় সম্ভব হলেও দেশে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ হয়নি কখনো। এতে করে মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিভিন্ন মহামারী একের পর এক মানব সভ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যে কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ কখনোই শান্তিতে থাকা সম্ভব হয়নি।
লেখকঃসাংবাদিক, কলামিস্ট, শিক্ষক ও চারুশিল্পী


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…