আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তবে কি এসেই গেল প্রাণবিনাশী নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন? হয়তো আসছে; এমন আশা দেখা যেতেই পারে। আর এই আশা দেখাচ্ছে ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরিকৃত করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে ব্রিটিশ এই কোম্পানি।
আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাসক্যাল সোরিওট বলেন, চলমান পরীক্ষা যদি সফল হয় তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিনের দুইশ’ কোটিরও বেশি ডোজ উৎপাদনের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামের ভ্যাকসিনটির আবিষ্কারক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এই ভ্যাকসিনটির শেষ ধাপের পরীক্ষার ফল আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আসবে। এই পরীক্ষায় সফল হলে তারপর ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদন চাওয়ার আগেই ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনটির উৎপাদন শুরু করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী প্যাসক্যাল সোরিওট বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা সঠিক পথেই রয়েছি… আমরা এখনই ভ্যাকসিনটির উৎপাদন শুরু করছি। আমরা ফল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন এটি ব্যবহার করতে পারি, সেজন্য এটি প্রস্তুত করছি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমান ধারণা অনুযায়ী, আগামী আগস্টের আগেই গ্রীষ্মে আমরা চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল পাবো। সেপ্টেম্বরে আমরা জানতে পারবো আসলেই ভ্যাকসিনটি কার্যকরী হবে কিনা।’
গত সপ্তাহে কোয়ালিশন ফর ইপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন (সিইপিআই), ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। দুইশ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের গতি দ্বিগুণ করার জন্য এসব কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ এই কোম্পানি।
বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ই স্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির পর অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ব্যাপক পরিসরে ভ্যাকসিনটির সরবরাহে সহায়তা করবে এই চুক্তি।
প্যাসক্যাল সোরিওট বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ভারতে ভ্যাকসিনটির সরবরাহ চেইন স্থাপন করেছে। চীনেও ভ্যাকসিনটির উৎপাদনের ব্যবস্থা করার উপায় খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা অলাভজনক উদ্দেশ্য নিয়ে ভ্যাকসিনটির উৎপাদন কাজ শুরু করেছে। যদি পরীক্ষায় হতাশ হতে হয়, তাহলে অর্থ হারাতে হতে পারে।
তিনি বলেন, কোয়ালিশন ফর ইপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনের মতো সংস্থাগুলোর সঙ্গে আর্থিক ঝুঁকি ভাগাভাগি করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আমরা আসলে ঝুঁকি নিয়েই উৎপাদন করছি। যদি কাজ করে তাহলে ভ্যাকসিনটি পাওয়ার এটিই একমাত্র উপায়।
অক্সফোর্ডের বহুল আলোচিত এই ভ্যাকসিনটির প্রথম দফায় গত এপ্রিলে কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। এবার শেষ ধাপের পরীক্ষায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
গত মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনটির খুব ভালোভাবেই কাজ করছে। ভ্যাকসিনটি নিয়ে তারা সঠিক পথেই আছেন।
অক্সফোর্ডের গবেষকরা গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন, তারা এই ভ্যাকসিনটির শেষ ধাপের পরীক্ষা প্রথমবারের মতো ব্রিটেনের বাইরে ব্রাজিলে চালাবেন। ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ জুনের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হবে।