গাজী মমিন,(চাঁদপুর) ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে শ্রমিক সংকটে পাকা ধান কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। ফরিদগঞ্জে দিশেহারা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন যুবলীগের নেতাকর্মীরা। করোনা পরিস্থিতিতে ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়া কৃষকদের ক্ষেতের ধান কাটা, বাড়ি নেওয়াসহ মাড়াই করে দিচ্ছেন।
যুবলীগের এ মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, চাঁদপুর-০৪ ফরিদগঞ্জ আসনের এমপি বীর মক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান।
সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক না পাওয়া অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন ইউনিয়নে কমিটি গঠন করে দিয়েছে উপজেলা যুবলীগ। কমিটির সদস্যরা প্রতিদিনই বিপাকে পড়া চাষিদের ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছেন। এই কার্যক্রমে উপকৃত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীরা যে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন সে কারণে খুশি এলাকাবাসী ও কৃষকরা।
এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উপজেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা ফরিদগঞ্জের পূর্ব বড়ালী গ্রামের মাঠে দরিদ্র চাষি তাফাজ্জল হোসেন বরকন্দাজের এক একর জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেন।
কৃষকের ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলহাজ্ মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান শাহীন এর নেতৃত্বে যুবলীগের ২০-২৫ জন কর্মী একটি ক্ষেতের ধান কাটছেন।
মাঠেই কথা হয় কৃষক তাফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে, তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রশাসনের নির্দেশে দূরের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় অন্য জেলা থেকে এবার এলাকায় খুব কম ধান কাটা শ্রমিক এসেছে। তাই মাঠের ধান পেকে গেলেও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছিলাম না। উপায়ান্তর না পেয়ে যুবলীগের ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা ধান কেটে দেওয়ায় মজুরি লাগল না। আমার অনেক উপকার হলো।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান শাহীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানুষের যে কোনও দুর্ভোগে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্র লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সবসময় তাদের পাশে থেকেছে। এই দুর্যোগ মুহূর্তে ধান কেটে দিয়ে কৃষকের পাশে থাকায় সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের এ কাজ যেন অব্যাহত থাকে এ জন্য সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো।
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলহাজ¦ মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া বলেন, চলমান সংকটময় মুহূর্তে বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুমে কৃষিশ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটায় খরচ পড়ছে বেশি। তাই অনেক দরিদ্র চাষি পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছে না। এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায় ধানাকাটার জন্য যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে হয়েছে। চাষিরা যোগাযোগ করলেই কমিটির সদস্যরা ধান কেটে ও মাড়াই করে কৃষকদের ঘরে তুলে দিচ্ছে।
এদিকে যুবলীগের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও কৃষকরা। অসহায় কৃষকদের ধান কেটে দেওয়ার যুবলীগের এই উদ্যোগ জেলাজুড়ে ব্যাপক সারা ফেলেছে। ধান পাকার পর থেকে প্রতিদিনই তারা উপজেলার কোনো কোনো এলাকায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন শ্রমিক সংকটে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা কেটে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিনা খরচে ধান ঘরে উঠায় দরিদ্র চাষিরা উপকৃত হচ্ছে। প্রতিটি কাজে যুবকরা এভাবে এগিয়ে এলে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যুবলীগের মতো অন্যান্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে এগিয়ে আসা উচিত।