গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ:
কে হচ্ছেন ফরিদগঞ্জের পৌরসভার মেয়র। এ নিয়ে পুরো শহরজুড়ে চলছে নানা না কঙ্কনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে চলছে আলোচনা। কেমন মেয়র চান? কি তাদের চাওয়া-পাওয়া। এ নিয়ে ভাবনা অন্ত নেই পৌরবাসীর।
পৌরবাসী খুঁজছেন তাদের পছন্দের মেয়র। যিনি শাসক না হয়ে এই পৌর শহরের প্রকৃত অভিভাবক হয়ে উঠতে পারে। যিনি সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন, ন্যায় বিচার, জবাবদিহিতা, জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত মডেল পৌর হিসেবে গড়ে তুলবেন-তাকেই অভিভাবকের আসনে বসাতে চান তারা। পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনি মন্তব্য পাওয়া গেছে। বিশিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন গাজী মমিন।
২০ টি গ্রাম ও ১৯.৭৫ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফরিদগঞ্জ পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত পৌরসভার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ৮৪ জন। ভোট কেন্দ্র ১৩ টি। প্রতিষ্ঠাকালে এটি ‘খ’ শ্রেণির হলেও ২০১৬ সালে ২০ জুন এটিকে ‘খ’ শ্রেণিকে উন্নীত করা হয়। সাবেক ১৩নং ফরিদগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের পুরো অংশ, ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক ৯নং ওয়ার্ড এবং ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রামের কিছু অংশ নিয়ে পৌরসভাটি গঠিত হয়।
আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে হতে যাচ্ছে এ পৌরসভার নির্বাচন। পৌরবাসীর প্রতিনিধি হতে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকে মেয়র পদপ্রার্থী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদপ্রার্থী যুবদল নেতা মো. ইমাম হোসেন পাটওয়ারী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকে মেয়র পদপ্রার্থী হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন।
নাগরিক চাহিদা পূরণে যিনি আন্তরিক :
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম জেলার রাজেরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় সুন্দর, সৎ ও নাগরিকবান্দব মেয়র চাই। নাগরিকদের চাহিদা পূরণে যিনি আন্তরিকতার সাথে কাজ করবেন, এগিয়ে আসবেন পৌরবাসীর সকল বিপদ-আপদে। ফরিদগঞ্জে গড়ে তুলবেন আদর্শ পৌরসভা হিসেবে। এমনই একজন মেয়র চাই আমরা।
তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জ ২য় শ্রেণীর একটি পৌরসভা। কিন্তু অবকাঠামোর দিক দিয়ে এই পৌরসভায় এখনো অনেক পিছিয়ে। পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নেও। তাই এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে যিনি কাজ করবেন ও জনগণের কথা শুনবেন এবং বুঝবেন। যিনি তার পৌরবাসীর কথাকে প্রধান্য দিবেন এমনজনকেই মেয়র চাইব।
বর্তমান ও সাবেক মেয়রদের সফলতা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান ও সাবেক মেয়ররা পৌরবাসীর আশা আকাঙ্খা পরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কারণ শুরুতে যিনি মেয়র হয়েছিলেন তিনি পৌরসভাকে গোছাতে অনেক সময় চলে গিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান মেয়র মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন, তবে কাজের দিকে পিছিয়ে রয়েছেন পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তার লাইটিং এইগুলোর দিকে কেউ খেয়াল দিতে চান না। সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে রাস্তার মধ্যে ময়লা-আর্বজনা উঠে যায়। এতে জনগণ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আশা করি এবার যিনি নির্বাচিত হবেন তার মাধ্যমে এই কাজগুলো সম্পন্ন হবে।
প্রতিশ্রুতিতে নয়,বাস্তবিক কাজের মেয়র চাই:
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবু হিতেষ শর্মা বলেন, 'আমরা একজন জনবান্ধব মেয়র চাই। যিনি পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে নয় নির্বাচিত হওয়ার পর সেই প্রতিশ্রুতিতে কাজ করে বাস্তাবয়ন দেখতে চায় পৌরবাসী।
তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জ পৌরসভাকে একটি পরিচ্ছন্ন পৌরসভা হিসেবে দেখতে চাই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, সৌন্দর্য বর্ধন করা, জলাবদ্ধতা সমস্যা দূরীকরণে কাজ করতে যোগ্য ব্যক্তিকেই আমরা মেয়র হিসেবে দেখতে চাই।
সু-শিক্ষিত ও দক্ষ মেয়র চাই:
ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুজ্জান জানান, পৌরসভায় সাবেক ও বর্তমান মেয়রের সময়ে উন্নয়ন হয়েছে। তবে জনগণের প্রত্যাশার চাইতে কম হয়েছে। এবার যিনি নির্বাাচিত হবেন তিনি যেনো পৌরসভার বর্তমান প্রেক্ষাপটে পৌরবাসী তাদের সমস্যা গুলি মেয়রের কাছে বলতে পারেন। একইসঙ্গে জনগণের সমস্যা শোনার জন্য মেয়র যিনি হবেন তিনি যেন আলাদা সময় রাখেন। সমস্যা সমাধানে সর্বত্বক চেষ্টা করেন।
সৎ ও নাগরিকবান্ধব মেয়র চাই:
নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা ফরিদগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র সহসভাপতি, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বাসিন্দা প্রবীর চক্রবতী বলেন, বর্তমানে মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরাপদ সড়ক। আগামী নির্বাচনে আমরা এমন এক মেয়র চাই- পৌরসভায় যিনি রাস্তাঘাট যানজটমুক্ত, নিরাপদ রাখতে কাজ করবেন। জনসাধারণ ও স্কুল-কলেজে আগত শিক্ষার্থীরা নিরাপদে সড়কে চলাচল করতে পারে, এ জন্য সড়কের দু’পাশে ল্যান চাই।
তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাই এসব সমস্যা সমাধান করে শান্তিপ্রিয় ফরিদগঞ্জ পৌরবাসীকে শান্তির শহর উপহার দিবেন। যিনি সৎ ও নাগরিকদের প্রধান্য দিবেন, তাকে মেয়র চাই আমরা।'
মেয়র হবেন জনগণের সেবক:
ফরিদগঞ্জ বাজার কমিটির নির্বাচিত সভাপতি মো. ফারুকুল ইসলাম বলেন, মেয়রকে হতে হবে জনগণের সেবক। যিনি গরীব, দুঃখী মানুষের সুখে রাখবেন, সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন আমরা এমন একজন মেয়র চাই। পৌরসভার ভেতরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে আনা, ব্যবসায়ীদের উপর জুলুম না করা, সর্বদা ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করে সমৃদ্ধিশালী পৌরসভার গড়ে তুলতে দক্ষ একজনকে চাই আমরা।
যানজট সমস্যাকে প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ফরিদগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট লেগেই থাকে। মূলত এর কারণ হলো- সিএনজি ও বাসস্ট্যান্ড। স্ট্যান্ডগুলোকে বাজারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থেকে সরিয়ে নিয়ে অন্য কোথায়ও স্থানান্তর করলে যানজট কমে আসবে। তিনি বলেন, যানজটমুক্ত শান্তির শহর উপহার দিবেন এমন মেয়র চাই আমরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুনছুর আহমেদ বিপ্লব, মোবাইল: ০১৬১৫৩৩৪৩৭৩, ইমেইল: manobkhabornews@gmail.com