অমরেশ দত্ত জয়ঃ
চাঁদপুর নৌ পথের ৭'শ ১৩ কিলোমিটার এলাকায় বয়া-বিকন বাতি সঙ্কটে নৌযান চালকসহ এ রুটে চলাচলকারী প্রায় ৫০ লক্ষ যাত্রীদের মৃত্যু ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দ্রুত এ সঙ্কট সমাধানে যথাযথ ব্যাবস্থা না নিলে ঘটতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা। যদিও চলতি বছরের সেপ্টম্বর পর্যন্ত সময়ে ২৬টি নৌ দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে চাঁদপুরের ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, নৌ পথের গভীর চ্যানেল ও নাব্যতা সঙ্কটপূর্ণ চ্যানেল চিহ্নিত করে বয়া ও বিকন বাতি। তবে অনেক বয়ার মধ্যে নেই প্রতিফলন টেপ। এতে করে রাতে লঞ্চের সার্চ আলোতে বয়া দেখা না যাওয়ায় দূর্ঘটনা ঘটে থাকে।
খোঁজ-খবর নিয়ে আরো জানা যায়, স্প্রীকাল বয়াগুলো নৌ পথে জাহাজ দূর্ঘটনারোধে বসানো হয়। সেই সাথে ডুবন্ত চরেও এগুলো ব্যাবহার করা হয়। আর লাইটার বয়াগুলো নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে বসানো হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু স্থানেই দিক-নির্নায়ক এসব যন্ত্রপাতির নাজুক অবস্থা!
এ সম্পর্কে চাঁদপুরের পাইলট তোফায়েল আহমেদ সুমন জানান, রাতে নদীতে নৌযান চলাচলে বয়া ও বিকন বাতির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে চলমান বর্ষা মৌসুমে এগুলো দিক-নির্নায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এসব বয়া-বিকন বাতি নদীতে পর্যাপ্ত পরিমানে নেই।
চাঁদপুরের পাইলট পরিদর্শক মো. নুরুন্নবী জানান, নদীতে এসব বয়া বিকন বাতি অনেকাংশেই জেলে ও দূর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাল্কহেডের ধাক্কায় এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই এগুলো রক্ষণা-বেক্ষণ ও নিরাপত্তায় সচেতনতা জরুরী।
এ বিষয়ে নিহারীকা জাহাজের মাষ্টার সাইফুল রহমান দুলাল জানান, আমরা সারাদেশে ৩টি জাহাজের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে বয়া বিকন বাতিসহ এসব সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেই। আর চাঁদপুর রুটে নিহারীকা জাহাজটি দিয়েই মালামাল বেশি আনা হয়। আমরা সর্বদা মাল আনায়ন করতে তৎপর রয়েছি।
এ সম্পর্কে নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ মধ্য ব-দ্বীপ চাঁদপুর শাখার যুগ্ম পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান থানদার জানান, চাঁদপুর নৌ পথ অঞ্চলে ৮০টি বিকন বাতি ও ১৬টি বয়া রয়েছে। বিকন বাতি গুলোর মধ্যে লালটা উজানের বামে এবং সবুজটা উজানের ডানে বসানো হয়। আমাদের কাছে এখনো আরো ৭টি বয়া মজুদ রয়েছে। যখন যেখানে এগুলো বসানো প্রয়োজন আমরা সেখানেই এগুলো বসানোর উদ্যোগ নেই। তবে চাঁদপুর নৌপথের জন্য এগুলো পর্যাপ্ত নয় বলেও তিনি স্বিকার করেন।
এদিকে চাঁদপুর থেকে ঢাকাসহ বরিশাল-বরগুনাগামী লঞ্চের চালক মো. শহিদুল ইসলাম, মো. শাহজালাল, বাসু দেব, মনির, মোস্তফা কামাল ও আবুল কালাম আজাদসহ আরো অনেক চালকগণ জানান, নদীতে স্রোত বাড়ার সাথে সাথে অনেক বয়া-বিকন বাতি ভেসে অন্য দিকে স্থানান্তরিত হয়। এতে প্রয়োজনীয় স্থানে এসব যন্ত্রপাতি না থাকায় ভুল পথে নৌযান চালিয়ে প্রায়ই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় অনুমান নির্ভর হয়ে আমাদের লঞ্চ চালাতে হয়। যাতে করে ডুবচরে লঞ্চের পাখা আটকে যায়। জরুরি অবস্থায় নদীর মাঝ পথে ফগ লাইট জ্বালিয়ে লঞ্চ নোঙ্গর করতে হচ্ছে। তখন যেন ভোগান্তির শেষ নেই।
তারা আরো জানান, চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-মাওয়া, চাঁদপুর-হরিণা, চাঁদপুর-জনতা বাজার, চাঁদপুর-বরিশাল রুটের অনেক স্থানেই পথ নির্দেশক বয়া-বিকন বাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। কাগজে কলমে বাঁশের মার্কার বাতির কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তার হদিস পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বরিশাল ও বরগুনা রুটে এসব নেই বললেই চলে। যার কারনে রাতে আমাদের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েই লঞ্চ চালাতে হচ্ছে। তাই এসব বিষয়ে যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বৃৃৃৃদ্ধির দাবী জানাচ্ছি।
নদীতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যপারে বাংলাদেশ কোষ্টগার্ড স্টেশন চাঁদপুরের নির্বাহী কর্মকর্তা এম ইছহাক আলী জানান, নদী পথে বয়া-বিকন বাতিসহ দেশের সম্পদ রক্ষায় আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমরা দুর্বৃত্ত ও চোরচক্রের বিরুদ্ধে নদী পথে সর্বদা তৎপর রয়েছি।
৪ঠা সেপ্টেম্বর শুক্রবার এ সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিএ এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার জানান, দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা এসব বিকন বাতির দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। তবুও আমরা আমাদের সাধ্যমত এ সঙ্কট সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতি মাসে ডুবচর নির্ধারণ করে ঠিকাদারের মাধ্যমে ১'শ ২০টি বাঁশ পুঁতে নাব্যতা সঙ্কট এলাকা চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর ওই বাঁশের ওপর সাথে সাথেই মার্কা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে চালকরা সঠিক পথ নির্ধারণ করে নৌযান চালাতে পারছে। তবে ঝুঁকি রোধে দক্ষ চালক/মাষ্টার দ্বারা নৌযান না চালালে আমরা কঠোরভাবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নিয়ে থাকি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুনছুর আহমেদ বিপ্লব, মোবাইল: ০১৬১৫৩৩৪৩৭৩, ইমেইল: manobkhabornews@gmail.com