অমরেশ দত্ত জয়ঃ
করোনায় মৃত সনাতনীদের দেহ প্যাকেটে করে মহাশ্মশানে আনার দাবী তুলেছেন চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির নেতৃবৃন্দ। মানবিক দায়িত্ব পালন করা দাহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই তাদের এ দাবী। জানা যায়,করোনা আক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার পরেও প্রায় ৫ ঘন্টার মতো ভাইরাস থেকে যায়। এতে করে মৃত ব্যক্তির সংশ্পর্শে আসা দাহকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তবে স্বাস্থবিধি মনে মৃতের দেহ প্যাকেট করে মহাশ্মশানে নিয়ে আসলে এ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আরো জানা যায়, বর্তমানে দাহকর্মী তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। মাত্র ৭ জন দাহকর্মী ২ সিফটে সৎকারের এই মানবিক কাজ সম্পন্ন করছেন। যদিও তাদের এই সংকটকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবুও যাতে কোনভাবে দাহকর্মীরা সৎকার কাজ করতে গিয়ে করোনা উপসর্গে মৃত বা করোনায় আক্রান্ত মৃতের সংশ্পর্শে এসে সংক্রমিত না হয়।
তাই বার্তি সতর্কতার জন্যই সনাতনধর্মের সর্বসাধারণে উদ্দেশ্যে হরিবোলা সমিতি মৃতের দেহ প্যাকেট করে মহাশ্মশানে নেওয়ার এই মানবিক দাবী করছে। এদিকে পৌর মহাশ্মশানের মহাপুরোহিত গোপাল চক্রবর্ত্তী জানান,শহরের বাগাদী রোডস্থ চাঁদপুর পৌর মহাশ্মশানটি প্রায় ১'শ ২৫ বছরের পুরানো মহাশ্মশান।
প্রায় ৪ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই মহাশ্মশানে শিব, ত্রীনাথ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী কালী মন্দির রয়েছে। আর তাই বিভিন্ন সময়ে এখানে মাসিক ও বাৎসরিক মেলা এবং নামকীর্ত্তণ করা হয়ে থাকে। আর এসব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সনাতনীদের সৎকার কাজ পরিচালনা করা হয়। যেখানে মৃৃতের সৎকারের জন্য পূর্বে থেকেই কাপড়, ধূপ, কাঠ, কলোস, চন্দন কাঠ, স্বর্ণের টুকরোসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র মজুদ রয়েছে। তিনি আরো জানান, ২ টি চিতা সার্বক্ষণিক তৈরি থাকে এই মহাশ্মশানে। যেখানে শুধু মরদেহ নিয়ে এসে রাখলেই হয়। মাত্র আড়াই থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে পুরো দেহটি পোড়ানো সম্ভব। প্রতিটি দাহ কাজ সম্পন্ন করতে খরছ দিতে হচ্ছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। এখানে ৭ জন দাহকর্মীদের মন্ত্র পাঠে ১ জন দাহ ঠাকুর ও মন্দিরের ২ জন পুরোহিত এ কাজে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করেন।
২২শে জুন সোমবার এ ব্যপারে এক সাক্ষাৎকারে হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক জানান, করোনাকালীন সময়ের গেলো ২ মাসে মহাশ্মশানে প্রায় ৬৭ টি মরদেহের দাহ সম্পন্ন করা হয়েছে। যারমধ্যে ১১ জন করোনা উপসর্গের রোগী ছিলো। তাদের আত্মীয় স্বজনরা এই দাহ কাজে এগিয়ে না আসলেও আমরা মানবিক বিবেচনায় দাহকাজ সম্পন্ন করে ফেলেছি। তিনি আরো বলেন, অনেকে করোনা উপসর্গে মৃত্যুবরণ করলেও তার পরিবার তা গোপন রাখে। তাই তিনি ভবিষ্যৎে এমনটি না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, করোনা মহামারী সময়ে আর্থিকসহ নানা অপ্রাতুলতায় সৎকার কর্মীদের এই মানবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাই সুধীসমাজ ও প্রশাসনের নিকট দাহকর্মীদের জন্য তিনি আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ব্যপারে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট চাঁদপুরের সহকারী প্রকল্প পরিচালক অমিত কুমার জানান, সনাতন ধর্মের অনেক লোক করোনা রোগে মারা যাচ্ছে। তবে যদি আমাদের কে এ বিষয়ে যথাসময়ে অবহিত করা হয়। তাহলে আমরা সনাতনীদের দাহ কাজ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তিনি আরো জানান, আমাদের কে মৃত রোগীর করোনা পজেটিভ ও ডেথ সার্টিফিকেট দিলে আমরা তাৎক্ষণিক মৃতের স্বজনদের হাতে ৭ হাজার টাকা অর্থসহায়তা তুলে দিচ্ছি। করোনা মূহুর্তে সনাতনীদের সেবায় আমাদের এ ধরণের মানবিক সাহায্য অব্যাহত থাকবে।