রাফিউ হাসানঃ
চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির নির্দেশনায় করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়ার সংবাদ পেলে কোন ব্যক্তির মরদেহ দলমত নির্বিশেষে দাফন সম্পন্ন করেন শাহরাস্তির "ছাত্রলীগের টিম-৪১"।
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস এর পরিস্থিতিতে যখন কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, ওই সময় মরদেহ এর পাশে আপন ছেলে-মেয়ে, আত্নীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী থাকেনা দাফন কাজে। তখন সংবাদ পেয়ে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি ছাত্রলীগের কর্মী সাজিদ মাহমুদ সাদ্দামের এর নেতৃত্বে লাশ দাফনে ছুটে যান ‘ছাত্রলীগ এর টিম-৪১' এর সদস্যরা।
তারই ধারাবাহিকতায় শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের বুরুলিয়া গ্রামের মমিনুল ইসলামের মরদেহ শুক্রবার রাত ২ টায় জানাজা শেষে লাশ দাফন সম্পন্ন করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপরে উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের বরুলিয়া গ্রামের মৃত ইসমাইল মিয়ার ছেলে মমিনুল ইসলাম (৪০) করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কুমিল্লা ইপিজেড এ চাকুরী করতেন। রাত ১১ টায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসলে প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে না আসায় “ছাত্রলীগের টিম-৪১" সদস্যরা, ইমাম নিয়ে মরদেহ গোসল, কাফন ও নামাজে জানাজা শেষে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করেন।
এসময় মরদেহ দাফন কাজে উপস্থিত ছিলেন শাহরাস্তি উপজেলার যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ও টামটা উত্তর ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান ওমর ফারুক দর্জি, মেহের উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের "টিম-৪১" এর সমন্বয়ক সাজিদ মাহমুদ সাদ্দাম ও তার সদস্যরা, ইসলামি ফাউন্ডেশনের পক্ষে হাফেজ মোঃ বদরুদ্দোজাসহ আরও অনেকে।
মৃতের আত্নীয়রা জানান, কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরি করা মোঃ মুমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ডায়বেটিস, জ্বর, সর্দি নিয়ে ৪ জুন বিকালে মৃত্যুবরন করেছেন। তাদের সকলের সন্দেহ করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। লাশ নিজের গ্রামে নিয়ে আসলে এলাকাবাসী তা ঢুকতে দিচ্ছে না, রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে রাখছে। পরবর্তীতে অত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারের হস্তক্ষেপে লাশ বাড়িতে নেওয়া হয়। লাশ গোসল করানোর মতো কোন হুজুর ছিলো না এবং খাটিয়া কেউ দিতে চায়না। অনেক বলার পরে একটা খাটিয়ার ব্যবস্থা করা হয়। "ছাত্রলীগ টিম ৪১" এবং ইসলামী ফাউন্ডেশনের সদস্যদের সহযোগিতায় লাশ গোসল, জানাজা দেওয়া এবং কবর খোঁড়া শেষে ইসলামী শরিয়তের নিয়ম মেনে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়।
শাহরাস্তি উপজেলা যুবলীগের লীগের অন্যমত সদস্য ও টামটা গ্রামের কৃতি সন্তান সমাজসেবক ওমর ফারুক দর্জি জানান, বরুলিয়া গ্রামের মৃত ইয়াছিন মিয়া ছেলে মমিনুল ইসলাম (৪০) করোনা উপসর্গ নিয়ে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলেও কেউ এগিয়ে না আসায় আমাকে মেহার উত্তর ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান মনির হোসেন ফোন করে বিষয়টি জানালে শাহরাস্তি ছাত্রলীগ "টিম-৪১" এর সমন্বয়ক সাজিদ মাহমুদ সাদ্দামকে ফোন করলে সে তার টিম নিয়ে এসে রাতে মমিনুলের লাশ দাফন সম্পন্ন করেন।
শাহরাস্তি উপজেলার ছাত্রলীগের কর্মী ও "টিম-৪১" এর সমন্বয়ক সাজিদ মাহমুদ সাদ্দাম বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম মহোদয়ের মানবিক নির্দেশনায় এবং উপজেলার যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ওমর ফারুক দর্জি ভাইয়ের ফোন পেয়ে আমাদের ‘টিম- ৪১’ এর সদস্যদের নিয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মমিনুল ইসলামের লাশ ধর্মীয় বিধি-বিধান অনুযায়ী দাফন সম্পন্ন করেছি। তা অব্যাহত থাকবে।
মেহের উত্তর ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান মনির হোসেন বলেন,
আমার ইউনিয়নে যখন মমিনুলের লাশ নিয়ে তার আত্নীয় বাড়িতে আসেন, তখন স্থানীয় বাঁধার সম্মুখীন হোন তারা।
এমনকি লাশটি রাখার জন্য মসজিদের খাটিয়া চেয়েও তারা (মৃতের আত্নীয়রা) পায় নি বলে আমাকে জানান। তাৎক্ষণিক আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার ও আমার বন্ধুসুলভ বড় ভাই ওমর ফারুক দর্জিকে জানালে তাদের সুপরামর্শে নিজেও উপস্থিত হয়ে রাত ২ টায় মৃতের লাশ দাফন করি।
তিনি আরও বলেন, জাতির এই ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে যখন সবাই যখন নিজেকে নিয়েই শুধু ব্যস্ত, তখন স্থানীয় ছাত্রলীগের এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। তারা জাতির এই দূর্যোগকালীন মুহূর্তে নিজেদেরকে উজার করে দিয়েছেন দেশ ও দশের জন্য। তাদের সকলের মঙ্গল কামনা করি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এর মানবিক দিকনির্দেশনায় গঠিত হয় ছাত্রলীগের "টিম-৪১" । শাহরাস্তি উপজেলার ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী সাজিদ মাহমুদ সাজ্জাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের এই টিম এ উপজেলায় করোনাভাইরাস বা এর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী সবার দাফন এবং সমাহিতের কাজ সম্পন্ন করবেন। ১০ ইউনিয়ন এর ৪১ জন কর্মী স্বেচ্ছায় এই কাজে এগিয়ে এসেছে, আত্মরক্ষার জন্য চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম তাদের পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়েছেন।