শাহরাস্তি প্রতিনিধি
সাব্বির দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার কারণে প্রায় বছর খানেক শিক্ষা জীবন থেকে অনেকটা দূরে ছিল! সুযোগ পেলেই তারা ও যে দেশের অহঙ্কার হতে পারে। তার প্রমান করে দিল সামাজিক সংগটন সুহৃদ সমাজ। সাব্বিরের স্বপ্ন ছিলো আকাশছোঁয়া। সেই শিক্ষার্থীর অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর আত্মপ্রত্যয়ের কাছে হার মেনেছে সকল দরিদ্রতা ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জিপিএ-৩.২২পেয়েছে গরিব মেধাবী এ শিক্ষার্থী। ভূমিহীন বাবার সন্তান আবার কেউ কায়িক পরিশ্রমী। অভাব অনটনে চলে তাদের সংসার। একবেলা খাবার পেলে আরেক বেলা খেতে পায় না তারা। এরপরও নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করে গেছে এই শিক্ষার্থী। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় পেয়েছে সফলতা। দরিদ্র বাবা-মার কুড়েঘরে এরা যেন চাঁদের হাসি ফুটিয়েছে। জীবনের প্রতিটি বাঁকে তারা দরিদ্রতার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে সাথে ছিল মানসিক সমস্যা। তবুও সে পিছু হটেনি। মনে সাহস ও প্রবল
ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগিয়ে গেছে। এতেই সে পেয়েছে কাংক্ষিত লক্ষ্য। তবে এই সফলতা পেলেও সামনের পথ নিয়ে চিন্তিত মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থী সাব্বির। তার মায়ের স্বপ্ন ভবিষ্যতে ভালো কিছু। কিন্তু দরিদ্রের কষাঘাতে এই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে ভাবছে তাদের পরিবার।
রবিবার দুপুরে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.২৩ পাওয়ার খবর শোনে মোঃ সাব্বির হোসেন আনন্দে আত্মহারা হলেও ভাল কলেজে ভর্তি আর পড়াশোনা করে উন্নত জীবন গড়ার আকাংক্ষা নিয়ে অনেকটায় বিচলিত। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দঃ ইউনিয়নের ধোপল্লা এলাকায় তার বসবাস।কিন্তু দারিদ্রতা নিত্য সংগী হওয়ায় একই ইউনিয়নের টামটা গ্রামে নানার বাড়িতে থেকে দিনমজুরী পেশায় জড়িয়ে জীবন সংগ্রামে জড়ান সাব্বির। সে টামটা আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসিতে অংশ নিয়েছিলা
ছেলের সাফল্যে খুশি তার মা- বাবা। সাব্বির মেধাবী হওয়ায় পড়ালেখায় সব সময় অনুপ্রেরণা যোগাতেন তার মা। এজন্য শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাব্বিরের পড়ালেখায় ছেদ পড়েনি। ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিতি ও ভাল হওয়ায় স্কুল শিক্ষকরা ও তাকে সহযোগিতা করেছেন।
জানাযায়, মোঃ সাব্বির হোসেন গেল বছরের শেষ সময় হঠাৎ করে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।দারিদ্র্য পরিবারের সন্তান ও আর্থিক দৈন্যতার কারণে চিকিৎসা ব্যয় যখন মিটাতে হিমশিম খাচ্ছিলো ঠিক তখনিই আলোকবর্তিকা হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে শাহরাস্তির সর্বাধিক প্রশংসিত সামাজিক সংগটন সুহৃদ সমাজ।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও তাঁর অফিসের সহযোগীতায় সুহৃদ সমাজ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক (টাকা) সংগ্রহ করেও সুহৃদ সমাজের তহবিল থেকে আর্থিক (টাকা) দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যয় - ভার গ্রহণ করে।যার পরবর্তিতে সাব্বির সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠে।অংশ গ্রহণ করে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায়। অর্জনকরে বি গ্রেড। জিপি এ ৩.২২
সাব্বিরের নানী জানান, সকালে পান্তা ভাত খেয়ে নাতি স্কুলে যেত। দুপুরে দুমুঠো খাবারের জন্য স্কুল থেকে বাড়িত আসতো। কিন্তু অনেক সময় মতো খাবার জোটতনা। তার স্বপ্ন নাতিকে শহরের ভাল কলেজে পড়ানোর। অর্থের অভাবে স্বপ্ন তার স্বপ্নই কি রবে!
সাব্বির জানায়,
সুহৃদ সমাজ সংগটনের কাছে সে কৃতজ্ঞ।আল্লাহর ইচ্ছায় সুহৃদ সমাজের উসিলায় সুস্থ হয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সার্টিফিকেট অর্জন করলাম।বিপদে পাশে থাকার জন্য শিক্ষক মণ্ডলীসহ সবার কাছে চিরঋনী।
টামটা আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ উল্যাহ বিএসবিএড জানান, প্রায় হারিয়ে যাবার পথ থেকে ফিরে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে সাব্বির আজ জীবন যুদ্ধে সফল মানব। তার এ সাফল্যের জন্য সুহৃদ সমাজ পরিবারকে মোবারকবাদ।
সুহৃদ সমাজের সভাপতি ইঞ্জিঃ মোঃ ইমতিয়াজ সিদ্দিকী তোহা বলেন,মানবিক সেবায় আমরা সবসময় জনগণের পাশে ছিলাম,আছি।ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে ও থাকবো।আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সাব্বির পড়ালেখা অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার খবর শুনে সহযোগীতার হাত বাড়াই। সে ভালে ফলাফল করছে জেনে আমি আনন্দিত।তার আগামী দিনগুলোর জন্য নিরন্তর শুভকামনা।
প্রসঙ্গত, সুহৃদ সমাজের উদ্যোগে ২০২০ সালের ২২ জন দরিদ্র, অসহায় ও মেধাবী এসএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণসহ প্রবেশ পত্রের জন্য টাকা দেওয়া হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুনছুর আহমেদ বিপ্লব, মোবাইল: ০১৬১৫৩৩৪৩৭৩, ইমেইল: manobkhabornews@gmail.com