• বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন

পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের দেখা মিলছে না !! ক্রেতা বিক্রেতার হাহাকার

আপডেটঃ : রবিবার, ৩ মে, ২০২০

 

অমরেশ দত্ত জয়ঃ

 

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সহ সব রকমের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিলো। এই অভায়শ্রম শেষে পুরোদমে নদীতে মাছ ধরা শুরু হলেও বাজারে ইলিশ ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাহাকার দেখা গেছে।শনিবার (২’রা মে) চাঁদপুর বড়ষ্টেশন মাছঘাট ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

 

এ ব্যপারে চাঁদপুর বড়স্টেশন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত জানান,নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ থাকলেও মাছঘাটে খুব একটা মাছ আসছে না। কারন বাজারে খুব একটা ক্রেতা আসে না। যেজন্য জেলেরাও হতাশায় থাকে মাছ ধরে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবে কিনা। তার ওপর লকডাউনে প্রশাসনের অন্যান্য ব্যস্ততায় নদীর অভিযানে নজর তেমন দিতে পারেনি। যেজন্য প্রচুর জাটকা নিধন হওয়ায় ইলিশের দেখা মিলছে না। তার ওপর বড় ইলিশ কম। বেশির ভাগই ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ। দাম প্রসঙ্গে তিনি জানান,বড়স্টেশন আড়তে এক কেজি সাইজের ইলিশের কেজি হচ্ছে সাড়ে ৯’শ টাকা। ১২’শ গ্রাম সাইজের ইলিশ ১১’শ টাকা,৭’শ গ্রাম থেকে ৮’শ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯’শ টাকা,৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ সাড়ে ৭’শ টাকা এবং ৩শ’ গ্রাম থেকে ৫শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ সাড়ে ৪শ’ টাকা।

 

অর্থাৎ ১ কেজি থেকে সোয়া ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৪০/৪২ হাজার টাকা মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে। তবে আশা করছি সময় বাড়ার সাথে সাথে ঘাটে প্রচুর ইলিশ আসা শুরু করবে। এদিকে ইলিশের দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন ঘাটে আসা ক্রেতারা। তারা জানান,ঘাটে ইলিশ কিনতে এসে কাঙ্খিত ইলিশ পাচ্ছি না। আর যা রয়েছে তার দামেও ঠিকঠাক হিসেব মিলাতে পারছি না। তাই ইলিশ না কিনেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। তবে ঘাটে ইলিশের চেয়ে অন্য আইটেমের মাছ বেশি দেখা যাচ্ছে।

 

এদিকে ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, চাঁদপুর অঞ্চলে ইলিশ আসার সময় এখনও আছে।ইলিশ কম ধরা পরলেও চাঁদপুর মাছ ঘাটে মাছের অভাব কিছুদিন পর হবেনা। তিনি আরো জানান,গত বছরে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন হয়েছে। এবার তা ছাড়িয়ে ইলিশ উৎপাদন সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিকটনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করি ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাহাকারের কারন নেই।

 

এদিকে জেলা মৎস কর্মকর্তা আসাদুল বাকি জানান,জাটকা সংরক্ষণে অন্য বছরের চেয়ে এবার কিছুটা নমনীয় ভূমিকা নিতে হয়েছে জেলা টাস্কফোর্সকে। কারণ করোনা পরিস্থিতির কারণে জেলেদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হয়েছে। তবুও যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে লঘুদণ্ড হলেও দেওয়া হয়েছে।

 

তিনি জানান, অভিযানে প্রায় ৫৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা সমমূল্যের কারেন্ট জাল আটক ও ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৬২ জেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি জেলেদের জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং ৭৫ জন জেলের জেল হয়েছে। তিনি আরো জানান,জেলার নিবন্ধিত ৫১ হাজার ১’শ ৮৯ জেলে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস যখন নদীতে জাটকা আহরণ থেকে বিরত ছিলো। তখন সরকার বিকল্প কর্মসূচি হিসেবে ফেব্রুয়ারি-মে পর্যন্ত ৪০ কেজি করে প্রত্যেককে চাল দিয়েছে। এছাড়াও জেলেদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ছাগল,সেলাই মেশিন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উপার্জন করতে পারেন।

 

এদিকে নদীতে মাছ ধরা প্রসঙ্গ নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান জানান, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও জেলেরা সেভাবে নদীতে নামতে পারবে না। কারণ চাঁদপুর এখনো লকডাউন আছে। তাই অন্য জেলা থেকে জেলেরা যেমন মাছ ধরতে নদী পথে চাঁদপুরে আসতে পারবে না। তেমন চাঁদপুরের জেলেরাও অন্য জেলায় যেতে পারবে না। লকডাউন নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। কেউ নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করলে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আশা করি সব ঠিক হয়ে আসবে।

 

প্রসঙ্গত,জাটকা ইলিশ রক্ষায় গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এই সময়ে মাছ ধরা,পরিবহন,বিক্রি ও মজুদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। পরবর্তীতে দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরা শুরু করে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…