নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ
অন্তঃসত্ত্বার সব থেকে বড় ভয় প্রসবকালীন ব্যথা। এই ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে নিজ থেকে, আবার অনেকে বেসরকারি ক্লিনিকের অর্থলিপ্সা এবং কিছু চিকিৎসকদের নৈতিকতার ঘাটতিকে দায়ী করে সিজারের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এভাবে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সিজার। কিন্তু এ ভয়কে জয় করে, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গর্ভবতী মায়েরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মুখী হচ্ছেন। গত মাসে উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণগুলোতে নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে ১১৬ জন নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছেন।
রোববার গর্ভবতী মা’দের নরমাল ডেলিভারী কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে এক উদ্বুদ্ধকরণ সভায় এ তথ্য জানান, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়–য়া। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আব্দুল হাদী মিয়ার সভাপ্রধানে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন, ডাঃ মঈনুল ইসলাম। জানা গেছে, প্রসবকালীন জটিলতা ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে মুক্তি পেতে এবং মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি এড়াতে গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসব ব্যবস্থা এবং প্রসবোত্তর সেবা কার্যক্রম জোরদারকরণে ২০১৭ইং সাল থেকে সম্পূর্ন নিজস্ব উদ্যোগে “নিরাপদ মাতৃত্বে আমরা সবাই” নামক একটি ইনোভেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।
এ ইনোভেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে এসেছে সরকারি সেবার ব্যাপক পরিবর্তন ও অগ্রগতি। যেমন, গর্ভবতী মায়েদের তালিকা ৫০ থেকে ৯০ ভাগ এ উন্নীত, মায়েদের গর্ভকালীন সেবা ৪২ থেকে ৫৩ ভাগ এ উন্নীত, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সংস্কার ৪০ থেকে ৭৫ ভাগ এ উন্নীত, দক্ষ সেবা প্রদানকারী ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ এ উন্নীত, স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ৪০ থেকে ৯০ ভাগ এ উন্নীত, মায়েদের অবহিতকরণ সভা শূণ্য থেকে ৫০ ভাগ এবং ব্যাপক উঠান বৈঠক। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গর্ভবতী মায়েদের সঠিক ও নির্ভূল তালিকাকরণের মাধ্যমে ‘প্রেগনেন্ট মাদার রেজিষ্ট্রেশন সফট্ওয়্যার’ নামক একটি সফট্ওয়্যারে ডাটা এন্ট্রি দেয়া হয়। এবং গর্ভতালিকা অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ অনুযায়ী গর্ভবতী মায়েদের সাথে সরাসরি এবং মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিমাসেই এ তালিকা হালনাগাদ করা হয়।
এ ছাড়াও ক’জন মা সিজার, বাড়ি, অন্যান্য এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ কে, কোথায় এবং কিভাবে প্রসব করেছেন, তারও একটি তালিকা করা হয়। এ জন্য সেবাদান কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবা প্রদানকারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা জানান, এই ইনোভেশন কার্যক্রমে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। যেখানে আগে উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ১০-১৫টি নরমাল প্রসব হতো। সেখানে গত মাসে ১১৬ জন গর্ভবতী মা, আমাদের কেন্দ্রে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর লক্ষ্যে নরমাল ডেলিভারীর বিকল্প নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে সিজারের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে আশংকাজনক হারে সিজারীয়ান প্রসবের কারনো মা ও শিশুর শারিরিক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে এবং ওই পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছেন। বাড়ীতে প্রসব অনিরাপ উল্লেখ করে মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, বাড়িতে অনিরাপদ প্রসবের কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা ও শিশু সংক্রমনের শিকার হয়ে থাকে এবং প্রসব পরবর্তী মা ও শিশুর বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে মাতৃমৃত্যু হার, অন্যদিকে বাড়ছে প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়ের শরীরিক নানা জটিলতা এবং আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ততা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়–য়া বলেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের “নিরাপদ মাতৃত্বে আমরা সবাই” নামক ইনোভেশন কার্যক্রমটি প্রশংসনীয়। ইতিবাচক কার্যক্রমে বিশেষ করে জনগণ উপকৃত হবে, এমন কাজে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা আছে এবং থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুনছুর আহমেদ বিপ্লব, মোবাইল: ০১৬১৫৩৩৪৩৭৩, ইমেইল: manobkhabornews@gmail.com