• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন

নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি রমজানের বাজার

আপডেটঃ : শনিবার, ১১ মে, ২০১৯

ছবি: নিজস্ব

গ্রামে কৃষকের কাছ থেকে যে দামে নিত্যপূণ্য কেনা হচ্ছে সেটি রাজধানীতে এসে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে। আবার রাজধানীতে হাত বদল হলে আরও দ্বিগুণ দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের। ফলে সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

শনিবার (১১ মে) রাজধানীর পাইকারি সবজির বাজার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এ বাজারে সব সবজিই বিক্রি হয় পাল্লা (৫ কেজি) হিসেবে। বাজারটিতে প্রতি পাল্লা মরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। এ হিসেবে প্রতি কেজির দাম ২৪-২৫ টাকা। পাইকারি বাজারের ২০০ গজ দূরের খুচরা বাজারেই এক পোয়া মরিচ বিক্রি হচ্চে ১৫-২০ টাকায়, একই দাম রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। ফলে হাত বদল হলে নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ হচ্ছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা য়ায়, নরসিংদীতে কৃষক পর্যায়ে মান ও জাতভেদে বেগুনের মণ বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, প্রতি কেজি ১৩ থেকে ১৮ টাকা। কিন্তু এ বেগুন পাইকারিতে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, কেজি ২৪ থেকে ৩০ টাকা। আরও এক হাত ঘুরে সে বেগুন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। চাষী পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা ১০ টাকার টমেটোও পাইকারিতে ১৫ থেকে ১৬ টাকা এবং খুচরা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নরসিংদীর জঙ্গি শিবপুর, বারৈচা ও পালপাড়া পাইকারি সবজির বাজারে প্রতি মণ শসা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কেজি ১৩ থেকে ১৫ টাকা; করলার মণ ৮০০ টাকা, কেজি ২০ টাকা, কাঁকরোলের মণ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, কেজি ২৩ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি শসা ২০ থেকে ২২ টাকা এবং কাঁকরোল ২৮ থেকে ৩০ টাকা এবং ও করলা বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা দামে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে যাথাক্রমে ৪০ থেকে ৫০, ৬০ থেকে ৭০ এবং ৫০ থেকে ৬০ টাকা দামে।

আবার ইফতারে ব্যবহৃত ধনেপাতা বাদ নেই এ তালিকা থেকে। শীত মৌসুমে প্রতি মণ ধনেপাতা কৃষক পর্যায়ে দাম ছিল ২০০ টাকার মতো। এখন রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে একই দামে। কাওয়ানবাজারে প্রতি কেজি ধনেপাতার পাইকারি দাম রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দামে।

কারওয়ান বাজারের সবজির পাইকার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, যে কোন সবজির পাইকারি ও কৃষক পর্যায়ের দামে তেমন পার্থক্য থাকে না। পণ্য কেনা ও পরিবহন খরচ বাদে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা লাভেই পাইকাররা পণ্য বিক্রি করে দেন। দাম যা বাড়ানোর তা বাড়ায় খুচরা দোকানিরা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজিতে ১ টাকা বাড়লেই তারা খুচরায় কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে দেন।

আলুর পাইকারি বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, তিনি প্রতি পাল্লা আলু বিক্রি করছেন ৭৫ টাকা দামে, কেজি ১৫ টাকা। কৃষক পর্যায়ে যা কেনা পড়েছে ১২ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকায়।

এদিকে মুদি পণ্যের পাইকারি ও খুচরা দামে রয়েছে বেশ ফারাক। বিশেষ করে রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি দামের প্রায় দ্বিগুণ দামে খুচরা ও মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজ। শ্যামবাজারে শনিবার প্রতি কেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১৭ থেকে ১৯ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ১৪ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে; কিন্তু খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়, আর আমদানি করা বড় পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক ওয়াহিদ হাসান রনি বলেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। এর সিংহভাগই দেশি পেঁয়াজ। সবচেয়ে ভালো মানের পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১৯ টাকা প্রতি কেজি। বরং বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকলেও সে অনুপাতে বিক্রি নেই। সে হিসেবে পাইকারি দামের দ্বিগুণ দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না।

পাইকারি ও খুচরা দামের পার্থক্য সম্পর্কে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দামের এ পার্থক্য হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। তাদের অতি মুনাফার কারণেই খুচরায় দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়। আবার খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে কম বিক্রি করে বেশি লাভের মানসিকতাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।

এজন্য ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে। এর মধ্যে গরুর মাংসসহ বেশকিছু পণ্য রয়েছে যেগুলোর দাম অনেক চড়া। এখন ভোক্তা যদি গরুর মাংস কেনার পরিমাণ কমিয়ে দেয় বা বেশি দামে পণ্য না কেনে, তবে বাধ্য হয়ে বিক্রেতাকে দাম কমিয়ে দিতে হবে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি বাড়ানোই এর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…