বাংলাদেশকে অবহেলা করার দিন শেষ যুক্তরাষ্ট্রের। যেসব দেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নজর দেয়া উচিত সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়াশিংটন সেভাবে নজর দিচ্ছে না।
বাংলাদেশের গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রী শেখ হাসিনা। এই বিজয়ের ফলে তিনি টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ঘটনা যথাযথভাবে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিগোচর হয়নি।
মার্কিন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রেও হয়তো বাংলাদেশ প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়নি বা আমেরিকায় চাকরি পেতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজরও কাড়তে পারেনি। কিন্তু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়া, সন্ত্রাসের বিস্তার রোধ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়াসহ বেশকিছু বিষয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের বাংলাদেশের নীতি পুনর্বির্বেচনা করা উচিত।
যদিও দেশটিতে কিছু পরিবর্তন এখনও প্রক্রিয়াধীন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তা অব্যাহত রাখতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হাউস ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটি।
বিশ্বজুড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন আয়রন লেডি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বাংলাদেশের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য শেখ হাসিনাকেই সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, ২০১৮ সালে তার শাসনামলেই জিডিপি ছিল সর্বোচ্চ। ওই সময় বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি অর্জন করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার যে কোন দেশের চেয়ে বেশি ছিল। জাপানের নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ সম্প্রতি বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে সফল দেশগুলোর তালিকায় রেখেছে বাংলাদেশকে।
দ্বিতীয়ত, রাজধানী ঢাকার হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছিল জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। ভয়াবহ ওই হামলার পরও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে রোধ করতে সক্ষম হন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকিও সফলভাবে দমন করতে সক্ষম হন তিনি।
তৃতীয়ত, দ্ব্যর্থহীন কূটনৈতিক জ্ঞান নিয়ে আবির্ভূত হন শেখ হাসিনা। কারণ চীন এবং ভারতের কাছে কৌশলগত যুদ্ধক্ষেত্রের এই দেশকে একটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম তিনি। এছাড়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের নেতাকে লজ্জায় ফেলেছেন। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে।
এসব কারণে বাংলাদেশের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হওয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে অর্থনীতিতে শীর্ষে থাকা ৩০ দেশের একটি হয়ে উঠবে।
রফতানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বতন্ত্র বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। এতে ওয়াশিংটনের অবস্থান আরও জোরালোই হবে না বরং সেই সাথে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের আধিপত্য কমতে শুরু করবে।
বলা যায় যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক জোরদার করা উচিত। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, উন্মুক্ত বাজার, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মানের মাধ্যমে দুটি গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্জন সহজেই সম্ভব। এসব বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের গণতান্ত্রিক নীতি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও বেশি অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা উচিত ওয়াশিংটনের।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুনছুর আহমেদ বিপ্লব, মোবাইল: ০১৬১৫৩৩৪৩৭৩, ইমেইল: manobkhabornews@gmail.com