• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

স্কুটি বদলে দিয়েছে পাহাড়ি নারীর পথচলা

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯

পাহাড়ের মেয়ে পাইচা মারমা। খাগড়াছড়ির মাইসছড়ি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। প্রতিদিনই খাগড়াছড়ি সদর থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে ছুটে চলেন তিনি। বাস, চাঁদের গাড়ি, মাহেন্দ্র বা পিকআপে চড়ে ১৫ কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে তার কর্মস্থল। অনেক সময় পুরুষের দখলে থাকে বসার জায়গাও। তাই রড ধরে ঝুলে যাওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকে না তার।

বছর তিনেক আগে হঠাৎ করেই কোন এক কর্মজীবী নারীর স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে পাইচা মারমার। তখনই স্কুটি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠা নারী এখন স্কুটিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আগে সময়মতো স্কুলে পৌঁছা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হলেও স্কুটি সে পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন অনেক কম সময় লাগে।’ ভোগান্তি আর অতিরিক্ত অর্থ খরচের হাত থেকেও বেঁচে গেছেন তিনি।

শুধু স্কুল শিক্ষক পাইচা মারমা-ই নয়, পাহাড়ের আরেক আত্মকর্মী আনুচিং মারমা, কলেজ ছাত্রী শ্রাবন্তী ত্রিপুরা, গানের প্রশিক্ষক চমচমী চাকমা, কলেজ ছাত্রী ও ফুটবলার কেলী চৌধুরী কিংবা নাচের শিক্ষক রিয়া চাকমা স্কুটিকেই বেছে নিয়েছেন স্বাচ্ছন্দের বাহন হিসেবে।

স্কুটির বদৌলতে সময় ও অর্থ দু’টোই বেঁচে যায় মন্তব্য করে খাগড়াছড়ি শহরের ‘লুক বিউটি পার্লারের’ কর্ণধার আনুচিং মারমা বলেন, ‘আগে টমটম বা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হতো, এখন সেটা নেই। এখন নিজের মতো করেই ছুটতে পারি।’ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনেক সময় বিয়ে বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে জানিয়ে আনুচিং বলেন, ‘কোন ক্লায়েন্টের বাড়িতে যেতে হলে আগে পরিবহনের জন্য যে ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হতো, স্কুটি সে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে।’ তার মতে, খাগড়াছড়ি শহরে ও শহরের বাইরে পঞ্চাশ জনেরও বেশি নারী স্কুটি চালান। যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি বন্ধন তৈরি হয়েছে।

পাহাড়ি নারীদের পাশাপাশি বাঙালি নারীরাও স্কুটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে জানিয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্রী শ্রাবন্তী ত্রিপুরা বলেন, ‘স্কুটি আমার নিত্যদিনকার রুটিনকে বদলে দিয়েছে। প্রতিদিন স্কুটি চালিয়েই ক্যাম্পাসে যাই। বিভিন্ন সময় বান্ধবীদেরও পৌঁছে দেই। রিকশা বা টমটম না পাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস মিস করার ভয় থাকে না।’

অন্যদের মতোই স্কুটিকে নিজেদের আস্থা ও নির্ভরতা হিসেবে দেখছেন চমচমী চাকমা ও রিয়া চাকমা। তাদের মতে, পাহাড়ের কর্মজীবী নারীদের জীবনধারাকে বদলে দিয়েছে স্কুটি। একবছর আগেও যথাসময়ে গানের স্কুলে পৌঁছানো যেত না জানিয়ে চমচমী চাকমা বলেন, ‘স্কুটি আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে। আমার ভোগান্তি দূর করেছে।’ একই মন্তব্য নাচের প্রশিক্ষক রিয়া চাকমার।

সমতলে নারীদের স্কুটি ব্যবহার অনেক পুরনো আর স্বাভাবিক ঘটনা হলেও ঝুঁকিপুর্ণ পাহাড়ি জনপদে নারীদের স্কুটি ব্যবহার একেবারেই নতুন। স্কুটি চালানোকে কেউ কেউ শখের বিষয় মনে করলেও এটিকে নিজেদের প্রয়োজন হিসেবেই দেখছেন পাহাড়ের নারীরা। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ের কর্মজীবী ও পেশাজীবী নারীদের পাশাপাশি কলেজ পড়ুয়াদের কাছেও স্কুটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…