গাজীপুর প্রতিনিধি ॥
“গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গাজীপুরে ৫ম জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২১ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২২ অক্টোবর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) গাজীপুর সার্কেল আয়োজন করে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও বিআরটিএ গাজীপুর সার্কেলের মোটরযান পরির্দশক কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুদ্দিন, গাজীপুর জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটির সদস্য প্রফেসর এম. এ বারী, গাজীপুর জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মাজহারুল ইসলাম মাসুম, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক আলহাজ্ব ডাঃ মোঃ লোকমান হোসেন, গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহম্মেদ সরকার, বিআরটিসি’র ডিজিএম (ট্রেনিং) প্রকৌশলী ফাতেমা বেগম, জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আহসান উল্লাহ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ছানোয়ার-ই-দীন, জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআরটিএ গাজীপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মোঃ আবু নাঈম।
এসময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) গাজীপুর জেলা শাখার দুর্ঘটনা অনুসন্ধান ও গবেষণা সম্পাদক সাংবাদিক মুহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক), মোঃ মেহেদী হাসান বিপ্লব (বাদামী বিপ্লব), বিআরটিসি’র ম্যানেজার কামরুজ্জামান সহ বিআরটিএ গাজীপুর সার্কেল, গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা ট্রাক মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে গণবসতি আমাদের এই দেশ। ঢাকার কাছে থাকায় গাজীপুরে লোক সংখ্যা বেশী। যানজটও বেশী। একজন আরেকজনকে না দোষে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের জন্য সকলকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ মাজহারুল ইসলাম মাসুম বলেন, দেখা গেছে অনেকে মোটরসাইকেলে এবং গাড়ীতে সাংবাদিক বা প্রেস লিখে চলাচল করছে। আদো কি তারা সাংবাদিক! আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলে এবং গাড়ীতে সাংবাদিক বা প্রেস লিখে মাদক ব্যবসাও করছে। তাদের গাড়ী, গাড়ীর কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক আলহাজ্ব ডাঃ মোঃ লোকমান হোসেন বলেন, ২৭ বছর আগে বান্দরবানে চিত্রনায়ক স্বামী ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। রেখে যান অবুঝ দুটি শিশু সন্তান জয় ও ইমাকে। ইলিয়াস কাঞ্চন ওই সময় সিনেমার শুটিংয়ে বান্দরবান অবস্থান করছিলেন। স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে দুটি অবুঝ সন্তানকে বুকে নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন নেমে আসেন পথে। পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়, এ স্লোগান নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সামাজিক আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)।
নিসচার আন্দোলনের ফলে ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকেই বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়ে আসছে।
ডাঃ মোঃ লোকমান হোসেন আরো বলেন, গাজীপুর শহরে যেখানে ইচ্ছা সেখানে গাড়ী থামিয়ে যাত্রি উঠানামা করা হয়। এতে আরো যানজটের সৃষ্টি হয়।
বক্তারা বলেন, সড়কে গতি কমানো; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করা; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে অনেকটাই কমে আসবে সড়ক দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে পণ্যবাহী যানবাহনের সংঘর্ষে। মূলত সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ডভ্যান এবং মোটরসাইকেল এখন মরণদূত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর ও টেকসই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। তবে সরকারের নির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং চালক ও সাধারণ জনগনের সচেতনতার মাধ্যমে সড়কে কমবে মৃত্যুহার, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।