বিশেষ প্রতিনিধি ॥
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্রগ্রামের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই মৌলবাদী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শক্তি দেশের উন্নয়ণে বাঁধাগ্রস্থ করতে ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, কোন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কখনই অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করতে পারেনা। সবসময় উশৃঙ্খল ও ধর্মান্ধ ব্যক্তিরাই অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করে।
তিনি আরো বলেন, যে সকল উশৃঙ্খল ব্যক্তিরা হাজীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। সবাইকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনা হবে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছে। এদেশে যেকোন ভাবেই হউক ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করা হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যতো বেঁচে থাকবে আপনাদের কোন ভয় নেই। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি।
চট্রগ্রামের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন পিপিএম (বার), বিপিএম (বার) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশ দূস্কৃতকারীদের ধরতে তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন আটক হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশের গুলিতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ৪জন মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩জন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১জন মৃত্যুবরণ করেছে।
নির্মাণাধীন একটি বিল্ডিংয়ের ৮ তলায় পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, পুলিশ জনগণের যান-মাল ও আত্ম রক্ষার্থে গুলি করেছে। সংগত কারণে সেখানে গুলি যেতে পারে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে।
এ দিকে হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় হাজীগঞ্জ উপজেলা ও এর আশে-পাশে অনির্দিস্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ পুজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছিরউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মো. মাইনুদ্দীন, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব-উল আলম লিপন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ হেলাল উদ্দিন মিয়াজী, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটা. আহসান হাবিব অরুন প্রমূখ।
উল্লেখ্য বুধবার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৮টার পরে হাজীগঞ্জ বাজারে বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা একটি মিছিল বের করে। মিছিল থেকে পূজামন্ডপ ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ হওয়াকে কেন্দ্র করে এই হামলা, সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে প্রথমে ৩ জন এবং বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে আরও এক কিশোরসহ মোট ৪জনের গুলিবিদ্ধ লাশ সনাক্ত করা হয়।
পুলিশ, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়, কুমিল্লা শহরের দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে হাজীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে স্থানীয় তরুণ, যুব সমাজ ও বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউঁর আখড়া পুজামন্ডপ অতিক্রমকালে কে বা কারা ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করে।
কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পুজামন্ডপের গেট ভাঙচুরের চেষ্টা করায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এতে করে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন ও চারজন গুলিবিদ্ধ হন। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র নিহত ও আহতের বিষয়টি নিশ্চত করেছে।
নিহতরা হলেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪), একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আলামিন (১৮) ও আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামিম হোসেন (১৭) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মো. বাবলু (৩৫)।
গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে মো. সবুজ (১৬), হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের প্রিতম (২০), কচুয়া উপজেলার রহিমানগর এলাকার জুনাশর গ্রামের মো. সিদ্দিকের ছেলে মো. হারেস (২৩) এবং অজ্ঞাত মিলন। এছাড়াও সংঘর্ষে ১৭ পুলিশসহ আহত হন আরও ৩০জন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুনছুর আহমেদ বিপ্লব, মোবাইল: ০১৬১৫৩৩৪৩৭৩, ইমেইল: manobkhabornews@gmail.com