গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ:
ইউনিয়ন থেকে পৌরসভাতে উন্নিত হলেও পৌরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়নি। পৌরসেবা নিয়ে বিভিন্ন পৌরবাসী আধুনিক জীবন যাপন করলেও সে সৌভাগ্য জোটেনি ফরিদগঞ্জ পৌরবাসীর কপালে।
হোল্ডিং ট্যাক্স সহ বিভিন্ন ট্যাক্স আদায় হলেও সেবার বিষয়টি আধুরাই থেকে গেল।
প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তাগুলিতে সাবেক মেয়রদের আমলে বিদ্যুৎ লাইন নির্মান হলেও তাতে এখন আর জ¦লে না বাতি। সুপেয় পানির লাইনের কাজ দীর্ঘদিন যাবত চলমান থাকলেও স্বপ্নই রয়ে গেছে গ্যাসের ব্যবস্থা। এছাড়াও ফরিদগঞ্জ পৌরসদর এলাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌর শহরে বাসিন্দারা।
সদর এলাকার বাসস্ট্যান্ড, ফিসারী অফিস এলাকা, কেরোয়াব্রীজ এলাকা দিয়ে দুর্গন্ধের কারনে মানুষ হাটাচলা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অথচ উপজেলা সদর ও পৌরসভা সদরে প্রবেশের জন্য উল্লেখিত তিনিটিই প্রধান রাস্তা। কোন আগন্তুক কে স্বাগত জানাননোর জন্যই প্রধান তিনিটি প্রবেশমুখে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ প্রতিনিয়ত রাখা হচ্ছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলির বর্জ থেকে সকল ধরনের ময়লা আবর্জনা উল্লেখিত স্থানগুলিতে ফেলা হয়। কখনও হাসপাতালে খালাস করা বাচ্চাদের লাশএখানে পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্য পৌরসভা গঠনের ১৭ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা। স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে, সরকারি-বেসরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীরাসহ পৌরবাসী। ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে শহরে ঢুকতে হয় পথচারীদের। এই দুর্গন্ধকে নিয়তি মেনে প্রতিদিন জনসাধারণের উপজেলার পৌর শহরে, গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি পুকুর পরিপূর্ণ হয়েছে ময়লা আবর্জনায়। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তি রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলাসহ ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিনপূর্বাঞ্চল হতে লোকজন পৌর সদরে চলাচল করে। আর একটি ময়লার ভাগাড় রয়েছে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স’র সামনে, এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে নির্মিত এ ভবনটির। ব্যহত হচ্ছে কার্যক্রম। তৃত্বিয়টি রয়েছে ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হতে সদরে প্রবেশের মুখেই। পৌরভবনের পিছনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে রয়েছে আরেকটি। ফরিদগঞ্জ বাজারের পশ্চিম-উত্তর অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের মরদেহ দাহ করার স্থান মহাশস্মানের পাশে ডাকাতিয়া নদীতে, এতে দুঃষিত হচ্ছে নদীর পানি বিলুপ্ত হতে বসেছে নদীর মাছ। সবগুলো ময়লার ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে অসংখ্য মানুষের বসবাস। দুর্গন্ধ আর ময়লা-আবর্জনা ছড়াছড়িতে উল্লেখিত এলকার মানুষের বসবাস দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ছড়াচ্ছে রোগ জীবানু। এ বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও পৌরবাসীরপক্ষ থেকে বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।
পৌরসভা সূত্র জানা যায়, ২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। বিগত ১৭ বছরে তিনজন মেয়র নির্বাচিত হলেও কোন একজনকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
কলেজ শিক্ষার্থী সোনালী আক্তার, বুশরা আক্তার, সাদ্দাম হোসেন, ঝুটনসহ অনেকেই বলেন, এখান দিয়ে কলেজে যাই। আমাদের দাবি পৌরসভা খুব দ্রুত এর একটা সমাধান করবে।
বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করাই কষ্টসাধ্য। স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন গাজী বলেন, এই ময়লার গন্ধে আমার বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া পাই না। দুর্গন্ধে নিজেরাও থাকতে পারি না। নিজের বাড়ি ফেলে যেতে পারি না, তাই কষ্ট হলেও বসবাস করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুনছুর আহমেদ বিপ্লব, মোবাইল: ০১৬১৫৩৩৪৩৭৩, ইমেইল: manobkhabornews@gmail.com