মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে নরমাল ডেলিভারী সেবা কার্যক্রম জোরদারকরণে লক্ষে উপজেলার দশটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রায় ২০ লাখ টাকার ব্যয়ে নরমাল ডেলিভারি সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপরাশেন এজেন্সীর (জাইকা) অর্থায়নে সোমবার দুপুরে এই নরমাল ডেলিভারী সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
উপজেলা পরিষদ মিলনাতয়নে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে টেলিকনফারেন্সে ডেলিভারী সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী আসনের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার।
বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথির পক্ষে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের হাতে নরমাল ডেলিভারি সামগ্রী তুলে দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাইনুদ্দিন। এর আগে তিনি বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। শুরুতেই পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম ও বিভিন্ন দিক তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মির্জা শিউলী পারভিন মিলি, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আলী, উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজওয়ানুর রহমান, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ, ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষে আলহাজ¦ সফিকুর রহমান মীর, হাজীগঞ্জ প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আল আজাদ প্রমুখ।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মো. মোস্তফা কামালের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো. কাউছার আলম ও গীতা পাঠ করেন পরিবার কল্যাণ সহকারী সাথী ধাম। এ সময় হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু ছাইদসহ সকল ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা সকল দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এই নরমাল ডেলিভারী সামগ্রী বিতরণের মধ্য দিয়ে জোরদার হবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ইনোভেশন কার্যক্রম। এর আগে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ২০১৭ সাল থেকে ‘নিরাপদ মাতৃত্বে আমরা সবাই ও আলোকিত কিশোর-কিশোরী’ নামক দুইটি ইনোভেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই ইনোভেশন কার্যক্রমের ফলে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।
‘নিরাপদ মাতৃত্বে আমরা সবাই’ এই ইনোভেশন কার্যক্রমের আওতায় ২০২২ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ১.৭১ থেকে .৭০ আনা, নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৪ থেকে ১২ এবং ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার ৩৮ থেকে ২৫ নামিয়ে আনা, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা কর্তৃক সম্পাদিত ডেলিভারী শতকরা ৮ থেকে ৩০ উন্নীত করা এবং সিজারের হার শতকরা ৫২ থেকে ২৫ নামিয়ে আনা।
এ ছাড়াও বাড়িতে প্রশিক্ষণ বিহীন ধার্ত্রী দ্বারা ডেলিভারীর হার শতকরা ৩১ থেকে ২৫ নামিয়ে আনা। এরমধ্যে স্যাটেলাইট ক্লিনিক ভিত্তিক সকল গর্ভবতী মায়েদের সঠিক ও নির্ভূল তালিকা করা, অনলাইন ভিত্তিক ‘প্রেগনেট মাদার কেয়ার ডট গব ডট বিডি’ নামক এ্যাপসে সকল গর্ভবতী মায়েদের তালিকাভুক্তি, পুরো গর্ভকালীন সময়ে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদের কমপক্ষে ৪ বার গর্ভকালীন সেবা নিশ্চিত করার কাজ চলমান।
অপর দিকে সেবাদান কেন্দ্র তথা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে সেবার মান উন্নীত করা, প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সেবা প্রদানকারীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা, কর্মী ভিত্তিক পূর্ববর্তী মাসে সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ অনুযায়ী গর্ভবতী মায়েদের তালিকা প্রনয়ন নিশ্চিত করা, প্রত্যেক ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মচারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে অবহিতকরণ সভার আয়োজন করা।
প্রত্যেরক ইউনিয়নে প্রতি মাসে গর্ভবতী মা, দম্পতিদের নিয়ে ৫/৬টি উঠান বৈঠকের আয়োজন করা। সম্ভব হলে প্রত্যেক গ্রামের প্রতিটি পাড়ায় উঠান বৈঠকের আয়োজন করা। ইতিমধ্যে উল্লেখিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব কার্যক্রমের ব্যাপক সফলতা এসেছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে। বেড়েছে গর্ভকালীন, প্রসব ও প্রসবত্তোর সেবা এবং নরমাল ডেলিভারী।্ এতে করে উপকৃত হচ্ছে উপজেলাবাসী।