সাখাওয়াত হোসেন শামীমঃ
হাজীগঞ্জ উপজেলার রান্ধুনীমুড়া গ্রামে আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর পূর্বে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল গ্রামের শত শত শিশু-কিশোর। যারা পড়তে চাইতো তাদের দূর-দূরান্তে গিয়ে পড়তে হতো। কিন্তু সবাইর পক্ষে দূরে গিয়ে পড়া সম্ভব হতো না। শিক্ষাবঞ্চিত এসব শিশুর কথা ভেবে তাদের আলোকিত করতে রান্ধুনীমুড়ার বিখ্যাত মজুমদার বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। কাশিম আলী মজুমদার, এয়াছিন মজুমদার ও সেকান্দর আলী মজুমদারের প্রচেষ্টায় ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রান্ধুনীমুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটিই এ গ্রামের প্রথম স্কুল। প্রতিষ্ঠাতাদের দানকৃত ৩৪ শতাংশ ভূমির উপর কালের সাক্ষী হয়ে এ বিদ্যালয়টি আজও দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়টির বয়স প্রায় ৯০ বছর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ
বিদ্যানিকেতন থেকে পড়াশোনা করে গেছেন।
স্কুলসূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ বিদ্যানিকেতনে ৪শ ৬ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। যার মধ্যে ছাত্র ১৯৬ জন, ছাত্রী ২১০ জন। ১০ জন শিক্ষক ৯টি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি মুন্সী মোঃ মনির।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক। নিয়মিত ক্লাস হয়। সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমে তারা অংশ নেয়। তবে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি ছোট। ফলে খেলাধুলা ব্যহত হয়। বিদ্যালয়ের সামনে একটি বড় পুকুর রয়েছে। পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করা হলে খেলার মাঠটি আরো বড় হতো। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন বলে তারা প্রত্যাশা করেন।
শিক্ষকরা জানান, সবার আন্তরিকতায় এ বিদ্যালয়ের ফলাফল সন্তোষজনক। ২০১৮ সালের পিইসি পরীক্ষায় এ বিদ্যালয় থেকে ৭৯ জন পরীক্ষা দেয়। যার মধ্যে পাস করেছে ৭৮ জন। অকৃতকার্য হয়েছে মাত্র ১ জন। এ পরীক্ষায় সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে ৫ শিক্ষার্থী। স্কুল কর্তৃপক্ষ শতভাগ পাসের লক্ষ্যে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, মজুমদার পরিবারের আন্তরিকতায় রান্ধুনীমুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এটি এ গ্রামের প্রথম স্কুল। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ এ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তাই স্কুলটির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা এ স্কুলটি আরো সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি এজন্যে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার। তিনি বলেন, এ স্কুলের প্রতিষ্ঠারা সমাজহিতৈষী ছিলেন বলেই এত জায়গা-সম্পত্তি দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁদের কল্যাণে এ গ্রামের সাধারণ মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পেরেছে, বর্তমানেও পারছে। বর্তমান মজুমদার পরিবারের সদস্যরাও স্কুলের সাথে যুক্ত আছেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্য, শিক্ষক, অভিভাববক ও শিক্ষার্থীবৃন্দসহ সম্মিলিতভাবে আমরা স্কুলটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা পিইসিতে শতভাগ পাসের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। অভিভাবকদের সাথেও প্রতিনিয়ত সমন্বয় করা হচ্ছে। আশা করছি আমরা আমাদের অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।