সফিকুল ইসলাম রিংকু:- মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত উপ-স্বাস্থ্য সহকারীর কর্তব্য অবহেলা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পানিতে পড়া আব্দুল্লাহ (২) নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। গত ২২ আগষ্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনাটি ঘটে।
মৃত শিশুটির নানা রহমত আলী বেপারী অভিযোগ করে বলেন, পানিতে পড়া আমার নাতি আব্দুল্লাহকে যোহর নামাজের আযানের পর বাড়ির লোকজন উদ্বার করে আমার দোকানে নিয়ে আসে।
সেই সময় আমিসহ মতলব খেয়াঘাটের উত্তর পাড়ে সিএনজি স্ট্যান্ডের অনেক লোক তার খোলা চোখ ও হাত-পা নড়াচড়া করতে দেখেছি। তারপর নদী পার হয়ে মতলব হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে এসে দেখি একজন লোক বসে আছে। (পরবর্তীতে জানতে পারি ওনি উপ স্বাস্থ্য সহকারী গোলাম মোস্তফা)।
ওনাকে বলি, আমার নাতি পানিতে পড়ে গিয়েছিল। তাড়াতাড়ি করে অক্সিজেন দেন। এই কথা শুনে তিনি ভিতরের রুমে চলে যান এবং প্রায় পাঁচ মিনিট পর বা’হাতে একটি শপিং ব্যাগ ও ডান হাতে বুকে লাগিয়ে চেক করার যন্ত্র নিয়ে বের হয়ে আসেন।
এসেই তিনি আমার নাতির বুক চেক করে পাশে দাঁড়ানো এক মহিলাকে ইসিজি মেশিন নিয়ে আসতে বলেই জরুরী বিভাগ থেকে রেব হয়ে চলে যান। ওই সময় জরুরী বিভাগে হাসপাতালের কোন লোকই ছিল না। কিছুক্ষণ পরে এক মোটা লোক (পরে জানতে পারি তিনি ডাক্তার এনামুল হক) জরুরী বিভাগের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে জানতে চান কি হয়েছে? তখন ওনাকে আমার নাতির বিষয়টি বলি।
এদিকে ওই মহিলা ছিলেন হাসপাতালের সামনের এক প্যাথলজির আয়া। ইসিজি মেশিন অনেক ক্ষণ ঘাটা ঘাঁটি করে ইজিসি রিপোর্ট বের হয়ে আসলে ডাক্তার ঘোষণা দেন আমার নাতি মারা গেছে। তখন আমি ডাক্তারকে বলি, ‘আনলাম জীবিত আর আপনি বলেন মৃত।’ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি প্রায় ১ ঘন্টা হলো কিন্তু কোন চিকিৎসাই দিতে পারলেন না। আর ওই লোক (গোলাম মোস্তফা) কোন কিছু না বলে চলে গেল কেন?
ওই সময় আমি হতাশ হয়ে ডাক্তারকে বলি, আমি বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানাবো। তখন ডাক্তার এনামুল বলে, স্যার (ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান) আসুক, ওনি আসলে কী বলে দেখেন? পবর্তীতে বিকাল সাড়ে ৩টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান এলে ওনাকে পুরো বিষয়টি জানাই। তখন তিনি বলেন, ‘মোস্তফার ভুল হয়েছে, রোগী রেখে চলে যেতে পারে না। আপনারা লাশ নিয়ে যান, আমি এর উপযুক্ত বিচার করবো।’
শিশু মৃত্যুর বিষয়ে উপ স্বাস্থ্য সহকারী গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই সময়ে আমার ডিউটি শেষ, পরবর্তী ডিউটি ছিলো তাপসের।
ডাক্তার এনামুল হক বলেন, আমাকে তাপস (উপ স্বাস্থ্য সহকারী) ফোন দিলে দ্রুত জরুরী বিভাগে এসে দেখি বাচ্চাটিকে ইসিজি করা হচ্ছে। তখন ওই বাচ্চাটির শারীরিক পরীক্ষা করে এবং ইসিজি রিপোর্ট দেখে মৃত ঘোষণা করি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃএকেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, শিশুটিকে মৃত আনা হয়ে ছিল। মানবিক কারণে সে (গোলাম মোস্তফা) ডিউটি শেষেও থাকতে পারতো। তার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, শিশু আব্দুল্লাহ বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার সিপাইকান্দি গ্রামের সিপাই বাড়ি। তার পিতার নাম নোমান সরকার, মাতা সাবানা বেগম। ঘটনার দিন দুপুরে আব্দুল্লাহ মা তাকে বাড়ির উঠানে খাবার খাইয়ে নিজে খাবার খেতে রান্না ঘরে যান। ওই সময় আব্দুল্লাহ আরেকটি শিশুর সাথে খেলা করতে গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পাশে জমিতে সৃষ্ট ছোট গর্তে পড়ে যায়। সেই গর্ত থেকে বাড়ির এক মেয়ে আব্দুল্লাহ কে উদ্বার করে।